5.3 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)শীর্ষ খবর

যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সংকট, ঋষি সুনাক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন নিয়ে চাপে

দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ছয় সপ্তাহের মাথায় ২০২২ সালের অক্টোবরে পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এরপর তার স্থলাভিষিক্ত হন অশ্বেতাঙ্গ কনজারভেটিভ নেতা ঋষি সুনাক। তিনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন দল ও প্রশাসনের মধ্যে চলছিল ব্যাপক অস্থিরতা। পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিও ছিল নানা সংকটের মুখে।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছিলেন, সবকিছু সামাল দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া বেশ কঠিন পরীক্ষা হতে যাচ্ছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ নেতার জন্য। তবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কয়েকটি প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছিলেন ঋষি সুনাক। দেশটির অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক অর্থনীতিসংক্রান্ত বিভিন্ন পরিসংখ্যান হাজির করবে যাতে যুক্তরাজ্যের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ধারণা পাওয়া যাবে বলে জানা যায়।

মহামারীর ধাক্কার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির উপরও। এতে ব্রিটেনের অর্থনীতি যেমন চাপে পড়ে, তেমনি মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পার্লামেন্টে প্রথম প্রশ্নোত্তর পর্বেই বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতার আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন ঋষি সুনাক। সেখানে অর্থনৈতিক সংকটের জন্য শাসক দলের তীব্র সমালোচনা করা হয়। সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, জানুয়ারিতে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে, যা পূর্বাভাসের চেয়ে কম।

যুক্তরাজ্য মন্দার মধ্যে পড়ে গেছে কিনা তা দেখার জন্য জিডিপির ডেটার দিকে সবার চোখ থাকবে। আশঙ্কা রয়েছে এতে সর্বশেষ প্রান্তিকেও অর্থনৈতিক সংকোচনের তথ্য সামনে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে এবার মন্দায় পতিত হতে পারে ব্রিটিশ অর্থনীতি। সেক্ষেত্রে তা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর জন্য ধাক্কা হতে পারে। কারণ ব্রিটিশ অর্থনীতিকে প্রবৃদ্ধির টেকসই পথে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।

পিএ নিউজ এজেন্সি ঋষি সুনাকের অগ্রাধিকার প্রতিশ্রুতির দিকে নজর রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী সুনাক ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণ করেছেন। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৪ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশটির মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

অর্থনীতিবিদরা জানান, মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে মূলত জ্বালানি খরচ কমে আসা ও সুদের হার বাড়িয়ে দেয়ার কারণে। তার পরও সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি সমভাবে হয়নি। নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে এবং কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্সের (সিপিআই) পরিসংখ্যান জানুয়ারিতে ৪ শতাংশ স্থির রয়েছে, যা ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের দ্বিগুণ।

২০২৩ সালজুড়ে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ছিল দুর্বল। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, দেশটির অর্থনীতি দশমিক ৫ শতাংশের কিছু বেশি বাড়তে পারে, আবার সংকুচিতও হতে পারে।

অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক পূর্বাভাস অনুসারে, এপ্রিল-জুনের মধ্যে ব্রিটেনের অর্থনীতি মোটেও বাড়েনি। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকেও সংকুচিত হয়েছে দেশটির অর্থনীতি। পরিসংখ্যান যদি অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকেও আরো সংকোচনের মুখোমুখি হয়, তবে কার্যত তা মন্দার ঝুঁকিই বাড়াবে।

ঋষি সুনাক তার প্রতিশ্রুতিতে নির্দিষ্ট করে বলেননি, তিনি ঠিক কোন সময়ের মধ্যে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটাতে চান। ফলে বিষয়টি তাকে বিতর্ক থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে পারে। কারণ তিনি স্পষ্ট করে বলেননি অর্থনীতি পুরো বছর বাড়বে নাকি কেবল তৃতীয়-চতুর্থ প্রান্তিক পর্যন্ত বাড়বে। ফলে এখনো সম্ভবনা রয়েছে, ঋষি সুনাকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হওয়ার। তবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র এখনো স্থবিরতার মধ্যে থাকলে কার্যত বিজয় দাবি করা কনজারভেটিভদের রাজনৈতিকভাবে খুব বেশি কাজে আসবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন কিনা তা আসন্ন পরিসংখ্যানগুলোয় স্পষ্ট হবে। প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থতা সাধারণ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত লেবার পার্টিসহ বিরোধীদের সমালোচনা করার খোরাক জোগাবে। সম্প্রতি টকটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ঋষি সুনাক জানিয়েছিলেন, ব্রিটেনের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি এসেছে নাকি তা স্থবির হয়েছে, তা পরিসংখ্যান পেলে বোঝা যাবে।

সূত্রঃ এপি

এম.কএ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 

আরো পড়ুন

সড়ক দুর্ঘটনায় অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস নিহত

ভেঙে পড়ার মুখে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

লন্ডন ছেড়ে বনে বাস করা দম্পতি ম্যাথু-লরেন কাব্য