যুক্তরাজ্যের ইপিং শহরের বেল হোটেলকে ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং স্থানীয়দের আতঙ্কে উত্তাল হয়ে উঠেছে এসেক্সের শান্তিপূর্ণ জনপদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডানপন্থী বিক্ষোভকারীরা হোটেলের সামনে জড়ো হয়ে বোতল, ডিম ও কাঠের গুঁড়ি নিক্ষেপ করে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়। ঘটনাস্থলে দ্রুত মোতায়েন করা হয় মেট ও এসেক্স পুলিশের অতিরিক্ত বাহিনী।
বিক্ষোভকারীদের অনেকে মুখ ঢেকে রাখে এবং “তাদের ফেরত পাঠাও” স্লোগান দিতে দিতে হোটেল ঘিরে ফেলেন। এক ব্যক্তি পুলিশের ভ্যানে উঠে পড়ে, অনেকে ইংল্যান্ডের পতাকা গায়ে জড়িয়ে পুলিশের গাড়ি আটকাতে চেষ্টা করে। পুলিশের একটি ভ্যান হাই স্ট্রিটের ব্লকেড ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একজন প্রায় চাপা পড়ে যান। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো আহতের খবর পাওয়া যায়নি।
হোটেল কর্মীরা জানান, কার পার্ক এখন ‘নো-গো জোন’। একজন কর্মী বলেন, “সবাই নিরাপদে আছে, তবে পুলিশ কাউকে পার্কিংয়ে যেতে দিচ্ছে না।”
স্থানীয় এক নারী বাসিন্দা বলেন, “আমাদের ছোট শহরে এমন তাণ্ডব মেনে নেওয়া যায় না। শিশুরা ভয় পাচ্ছে, আর শহরের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে।” অন্য এক বাসিন্দা বলেন, “হ্যাঁ, অভিবাসী হোটেলটা আদর্শ নয়, কিন্তু এই দাঙ্গাকারীরা তার চেয়েও ভয়ংকর।”
বিক্ষোভের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হোটেলবাসী ইথিওপিয়ান নাগরিক হাদুশ গারবেরস্লাসি কেবাতু (৩৮)। তার বিরুদ্ধে একাধিক শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন।
এর আগেই হোটেলের জানালায় “ঘরে যাও”, “এটা ইংল্যান্ড, মরো” জাতীয় বর্ণবাদী গ্রাফিতি দেখা যায়। এমনকি রবিবার কিছু ব্যক্তি হোটেল কর্মীদের আক্রমণ করেন, যাদের অভিবাসী বলে ভুল করেন।
ইপিং ফরেস্ট ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের প্রধান ক্রিস হুইটব্রেড হোটেলটির ব্যবহার নিয়ে হোম অফিসকে দায়ী করে বলেন, “এই জায়গা অভিবাসীদের জন্য অনুপযুক্ত। পর্যাপ্ত সেবা, নিরাপত্তা ও পরিকল্পনা ছাড়া এই সিদ্ধান্ত শহরবাসীর জন্য হুমকি।”
এসেক্স পুলিশের চিফ সুপারিনটেনডেন্ট সায়মন অ্যান্সলো বলেন, “এটি ছিল অপরাধ। যারা করেছে তারা ইপিংয়ের প্রতিনিধি নয়। আমরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি—যারা অপরাধে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বেল হোটেলের কাছাকাছি এক ঘটনায় ডিন ওয়াল্টারস (৬৫) নামে এক ব্যক্তিকে ‘দাঙ্গা’-র অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি জামিনে মুক্ত হয়েছেন এবং ২৪ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হবেন।
পুলিশ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিচারাধীন মামলার প্রতি সম্মান রেখে গণমাধ্যম ও জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনো প্রকার পূর্বাগ্রহ আদালতের কার্যক্রমে প্রভাব না ফেলে।
সূত্রঃ দ্য মেট্রো
এম.কে
১৮ জুলাই ২০২৫