যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে শপথ অনুষ্ঠানে রাজার প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিতে হয় প্রতিনিধিত্বকারী সাংসদদের। নতুন শপথ অনুষ্ঠানে নরউইচ সাউথের প্রতিনিধিত্বকারী সাংসদ ক্লাইভ লুইস রাজার প্রতি আনুগত্যের সঠিক শব্দ ব্যবহার করেন নাই বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়। যা তাকে সংসদীয় আসন হারানোর ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
গত সপ্তাহে লেবার পার্টির এই সাংসদকে প্রথম চেষ্টায় সঠিক শব্দ প্রয়োগে ব্যর্থ হবার পর দ্বিতীয়বার হাউস অব কমন্সে সঠিক শব্দ প্রয়োগ করে শপথ নিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানা যায়।
নরউইচ সাউথের সাংসদ ক্লাইভ লুইসকে জানানো হয়েছে আইন অনুসারে “কিং চার্লসের উত্তরাধিকারী এবং উত্তরসূরীদের আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি না দিলে তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে।
মিঃ ক্লাইভ লুইস সম্পর্কে জানা যায় তিনি রাজতন্ত্রের বিরোধিতাকারী একজন রাজনীতিবিদ। তাই তিনি তার প্রথম শপথ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ” আমি শপথ করছি গণতন্ত্রের উপর বিশ্বাস রেখে। আমার আশা একদিন আমার সহকর্মী রাজনীতিবিদ ও সাংসদরা প্রজাতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বাসের উপর আস্থা রেখে শপথ বাক্য পাঠ করতে পারবেন। প্রজাতন্ত্র ও গণতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সেই সময় পর্যন্ত আইন অনুসারে আমি আন্তরিকভাবে এবং সত্যই ঘোষণা করছি যে আমি বিশ্বস্ত থাকব মহিমান্বিত কিং চার্লসের প্রতি।”
মঙ্গলবার মিঃ লুইসকে হাউস অব কমন্স কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সতর্ক করা হলে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো শপথ করার জন্য কমন্সে ফিরে আসেন। মিঃ লুইসকে জানানো হয় আইনানুসারে রাজার প্রতি আনুগত্য সঠিকভাবে শপথ বাক্যে উচ্চারন না করা হলে তাকে ৫০০ পাউন্ড জরিমানা করা হতে পারে এবং তার আসনটি হারানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।
যার দরুন দ্বিতীয় প্রয়াসে তিনি শপথ বাক্যে বলেন, “আমি আমার দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে এবং মানবাধিকারকে সমর্থন দিয়ে এই সংসদে নির্বাচিত হয়েছি। আমি নিশ্চিত করি আমি বিশ্বস্ত থাকব রাজার কিং চার্লসের প্রতি এবং আইন অনুসারে কিং চার্লসের উত্তরাধিকারী এবং উত্তরসূরিদের প্রতি।”
সঠিক শব্দ ব্যবহার করে শপথ সম্পন্ন করার অল্প পরেই মিঃ লুইস স্যোশাল মিডিয়া এক্সে পোস্ট করেন,
” গত সপ্তাহে কিং চার্লসের উত্তরাধিকারী এবং উত্তরসূরীদের ‘প্রতি আনুগত্যের সঠিক শব্দ চয়ন না করায় আমার পূণরায় শপথ নিতে হয়েছিল হাউস অব কমন্সে। যুক্তরাজ্যের জনসাধারণের বেশিরভাগ লোক গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও শ্রদ্ধাশীল। তাই আমি আশা করি একদিন সংসদ সদস্যরা সেই মূল্যবোধের ভিত্তিতে শপথ গ্রহণ করতে পারবে। যদি আমি ১৮৬৬ সালের আইনানুসারে শপথ বাক্য পুনরায় পাঠ না করতাম তবে আমাকে জরিমানা করা হতো। আমি আইনী পদক্ষেপের শিকার হতে পারতাম এবং আমার আসনটিও খালি ঘোষণা করা হতো। এই নিয়ম পরিবর্তন করা উচিত। আমাদের এমপিদের গণতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে শপথ পাঠ করাই পছন্দ বলে মনে করি।”
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্টে শপথ গ্রহণ হ’ল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সংসদ সদস্য এবং হাউস অফ লর্ডসের সদস্যরা সংসদে তাদের আসন গ্রহণ করার আগে রাজার মুকুটের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করতে হয়।
সংসদ সদস্যরা শপথ নিতে হয় কোনো ধর্মীয় পাঠ্য ব্যবহার করতে পারেন নতুবা ধর্মীয় পাঠ্যের বাইরেও শপথ পাঠ করতে পারেন। তবে তাদেরকে যুক্তরাজ্যের ১৮৬৬ সালের আইন অনুসারে রাজার প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি অবশ্যই প্রদান করতে হয়।
সূত্রঃ স্কাই নিউজ
এম.কে
১৭ জুলাই ২০২৪