যুক্তরাজ্য সরকার নতুন অভিবাসন বিধি প্রকাশ করেছে, যা বিভিন্ন রুটে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে। “এইচসি ১৩৩৩” নামের এই বিবৃতির মাধ্যমে অভিবাসন কাঠামোকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। অধিকাংশ সিদ্ধান্ত আগেই ঘোষিত হলেও কয়েকটি নতুন পদক্ষেপ বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে।
১৪ অক্টোবর ২০২৫ থেকে বোতসোয়ানা নাগরিকদের জন্য যুক্তরাজ্যে প্রবেশের আগে ভিসা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই দিনে ঘোষণা অনুযায়ী, ১১ নভেম্বর থেকে ফিলিস্তিনও ভিসা-নির্ভর দেশের তালিকায় যুক্ত হবে। অর্থাৎ, ফিলিস্তিনের নাগরিকদের এখন থেকে যাত্রার আগে ভিসা নিতে হবে।
একই সময়ে জার্মান শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে লন্ডন। ১৯ বছরের নিচে কোনো জার্মান শিক্ষার্থী যদি অন্তত পাঁচজনের স্কুল সফরদলে যুক্ত থাকে, তবে তাদের যুক্তরাজ্যে আসার জন্য ভিসা বা ইলেকট্রনিক অনুমতির প্রয়োজন হবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইইএ ও সুইস স্কুল শিক্ষার্থীরাও শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই প্রবেশ করতে পারবে।
নতুন বিধি অনুযায়ী, রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের স্ত্রী, স্বামী বা সন্তান এখন থেকে “রাষ্ট্রহীনতা সংক্রান্ত পরিশিষ্ট” অনুসারে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ বা থাকার আবেদন করতে পারবেন। যদি কেউ পরে পরিবারে যুক্ত হন, তবে তারা পারিবারিক রুটের আওতায় আবেদন করবেন।
বিদেশি কর্মীদের নিয়োগে খরচ বাড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে। নিয়োগদাতাদের প্রতি কর্মীর জন্য বার্ষিক দক্ষতা ফি এক হাজার পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে এক হাজার তিনশ বিশ পাউন্ড করা হয়েছে, যা ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি। এতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের মোট ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।
কর্মসংস্থান ও শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষাগত যোগ্যতার মানও কঠোর করা হয়েছে। দক্ষ কর্মী, উচ্চ সম্ভাবনাময় ব্যক্তি এবং সম্প্রসারণ রুটে ইংরেজি দক্ষতার ন্যূনতম মান এখন থেকে বি-২ পর্যায়ে নির্ধারিত হয়েছে। এটি ৮ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে কার্যকর হবে।
“উচ্চ সম্ভাবনাময় ব্যক্তি” রুটে কিছু সম্প্রসারণ আনা হলেও আবেদন গ্রহণের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আট হাজারে। বর্তমানে এই রুটে বছরে প্রায় দুই থেকে চার হাজার আবেদন গ্রহণ করা হয়, ফলে নতুন সীমা ভবিষ্যতের অতিরিক্ত আবেদন রোধে সহায়ক হবে।
গ্লোবাল প্রতিভা রুটে নতুন সুযোগ যোগ হয়েছে। স্থপতিরা এখন থেকে দলীয় কাজের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্যের প্রমাণও দিতে পারবেন। সরকার জানিয়েছে, ২০২৬ সালে গবেষক, ডিজাইনার, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন পেশাজীবীদের জন্য আরও সংস্কার আনা হবে।
শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে স্নাতকেরা পড়াশোনা শেষে দুই বছর এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা তিন বছর যুক্তরাজ্যে থাকতে পারেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি ২০২৭ থেকে স্নাতকদের মেয়াদ কমিয়ে ১৮ মাস করা হবে, যদিও পিএইচডি স্নাতকদের জন্য আগের মতো তিন বছরই বহাল থাকবে।
পড়াশোনা শেষে ব্যবসা শুরু করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা এখন থেকে “নবপ্রবর্তক উদ্যোক্তা” রুটে যেতে পারবেন। ২৫ নভেম্বর থেকে কার্যকর এই নিয়মের আওতায় তারা স্বনিয়োজিত হতে পারবেন। এর পাশাপাশি নতুন শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ভিসার আর্থিক শর্তও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
১১ নভেম্বর থেকে পুরনো “প্রত্যাখ্যানের ভিত্তি” বাতিল করে নতুন “উপযুক্ততা অধ্যায়” চালু হচ্ছে। এতে পূর্বের জটিলতা দূর হয়ে কাঠামোটি আরও সরল হবে বলে সরকার জানিয়েছে।
মৌসুমি শ্রমিকদের জন্যও নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে ১২ মাসের মধ্যে ছয় মাস কাজের অনুমতি থাকলেও এখন তা ১০ মাসের মধ্যে ছয় মাস করা হয়েছে। একই রুটে পুনরায় ফিরতে হলে চার মাসের বিরতি রাখতে হবে।
ইউক্রেন পারমিশন এক্সটেনশন ব্যবস্থায়ও কিছু পরিবর্তন এসেছে। এখন থেকে অভিভাবক বা আইনি অভিভাবকের মেয়াদ অনুযায়ী শিশুর অনুমতিপত্র নির্ধারিত হবে।
নতুন বিধিগুলো পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে ২০২৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। বিশ্লেষকদের মতে, এসব পরিবর্তন যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থা আরও কঠোর করবে, বিশেষত দক্ষ কর্মী ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে।
সূত্রঃ ফ্রি মুভমেন্ট
এম.কে
১৪ অক্টোবর ২০২৫