যুক্তরাজ্যের নেপিয়ার ব্যারাক আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার জন্য প্রথম গণ আবাসন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। বহু বছরের বিতর্কের পর যা বর্তমান লেবার সরকার বন্ধ করতে যাচ্ছে। এই আশ্রয় সেন্টারে বাসস্থানের নিম্নমান, ব্যাপক কোভিড সংক্রমণ, জরাজীর্ণ ব্যবস্থা এবং কট্টর-ডানপন্থীদের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
এই তথ্যটি সংসদের সর্বদলীয় হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির তদন্তের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথিতে রয়েছে। নথিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে: “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেপিয়ারে কার্যক্রম পরিচালনা করবে, তারপর এটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
নেপিয়ার ব্যারাক এবং ওয়েলসের পেমব্রোকশায়ারের পেনালি ব্যারাক ২০২০ সালের শেষ এবং ২০২১ সালের শুরুতে স্বল্প সময়ের জন্য আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। করোনা মহামারির সময় আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চাপে পড়ে এই কেন্দ্রগুলো খোলা হয়েছিল।
নেপিয়ার ব্যারাকে ৩২৮ জন পুরুষ আশ্রয়প্রার্থী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, যাদের ডরমিটরিতে রাখা হয়। জুলাই ২০২১ সালে এখানে বড় কোভিড সংক্রমণ ঘটে। একই বছর উচ্চ আদালতের এক রায়ে বলা হয়েছিল যে এই স্থাপনাটি “ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করে না।”
প্রথমদিকে, আশ্রয়প্রার্থীদের এখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাখা হতো, তবে পরবর্তীতে ৯০ দিনের সীমা নির্ধারণ করা হয়, যা সেখানে অবস্থানরতদের জন্য সময়টা কিছুটা সহনীয় করে তোলে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গণ আবাসন ব্যবস্থার ব্যবহার বা পরিকল্পনা সবসময় বিতর্কিত ছিল। লিংকনশায়ারের আরএএফ স্ক্যাম্পটন এবং লিন্টন-অন-ওউসে সামরিক ঘাঁটিগুলো আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ওয়াচডগ সংস্থা ইস্ট সাসেক্সের বেক্সহিলে “নর্থআই” কেনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেছে বলে তথ্যমতে জানা যায়। একইভাবে, আশ্রয়প্রার্থী লিওনার্ড ফারুকুর সম্ভাব্য আত্মহত্যার পর মৃত্যু এবং মারণব্যাধী লিজিওনেলা ব্যাকটেরিয়া পাওয়ার কারণে আলোচিত “বিবি স্টকহোম” জাহাজও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে শুধুমাত্র এসেক্সের দূরবর্তী সামরিক ঘাঁটি “ওয়েদার্সফিল্ড” চালু রয়েছে, যার বন্ধ হওয়ার নির্দিষ্ট তারিখ নেই। তবে, সম্প্রতি উচ্চ আদালতের এক রায়ে তিনজন আশ্রয়প্রার্থীকে সেখানে অবৈধভাবে রাখা হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও মামলার বেশিরভাগ বিষয়ে আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষেই রায় দিয়েছে।
আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী এমিলি সুতহিল নেপিয়ারের পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জ করে বলেন,
” নেপিয়ার ব্যারাকে আর আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা হবে না, এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। চার বছর আগে উচ্চ আদালত রায় দিয়েছিল যে সরকার অবৈধভাবে আমাদের মক্কেলদের এখানে রেখেছে, তবুও এখনো শত শত আশ্রয়প্রার্থী এখানে অবস্থান করছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশেষত নির্যাতন ও মানব পাচারের শিকার আশ্রয়প্রার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশি ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। তাদের মর্যাদার সঙ্গে থাকা ও ন্যায়সঙ্গত আশ্রয় পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যা সামরিক ব্যারাকে গণহারে রেখে পূরণ করা সম্ভব নয়।”
নেপিয়ার ড্রপ-ইন সেন্টারের পরিচালক স্যালি হাফ বলেছেন: ” পরিত্যক্ত সামরিক স্থাপনা, যা সরকারের ধ্বংস করার পরিকল্পনা রয়েছে, সেখানে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা আমাদের জাতীয় মর্যাদার জন্য লজ্জাজনক। তবে এই ক্যাম্প স্থানীয় কমিউনিটিকে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে উদ্বুদ্ধ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “নেপিয়ার ব্যারাকের মতো গণ আবাসন কেন্দ্রগুলোর উদ্দেশ্য সফল হয়নি। এগুলো মানুষের যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে থামাতে পারেনি, বরং স্থানীয় জনগণের মধ্যে সংহতি তৈরি করেছে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৯ মার্চ ২০২৫