TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের নিতে চায় কসোভো, নিরাপত্তা সহায়তা চায় বিনিময়ে

যুক্তরাজ্যের আশ্রয় প্রত্যাখ্যাতদের তৃতীয় দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা ঘিরে ইউরোপে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কসোভো। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আলবিন কুর্তি জানিয়েছেন, কসোভো যুক্তরাজ্যের এই পরিকল্পনায় সহায়তা করতে প্রস্তুত এবং এই বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ইতিমধ্যেই আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, “আমরা যুক্তরাজ্যকে সাহায্য করতে চাই, কারণ এটি আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক দায়িত্ব। আমাদের সক্ষমতা সীমিত হলেও আমরা সহযোগিতা করতে আগ্রহী।”

কুর্তি আরও জানান, এই উদ্যোগের বিনিময়ে কসোভো নিরাপত্তা খাতে সহায়তা চায়—যেমন কৌশলগত চুক্তি, নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে। তিনি বলেন, “আমরা অবশ্যই লাভবান হতে চাই, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আপনারা একসময় আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন, তাই আপনাদের সাহায্য করাকে আমরা কর্তব্য মনে করি।”

এই প্রস্তাবের মাধ্যমে কসোভো বলকান অঞ্চলে এক ব্যতিক্রমী অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, অঞ্চলের অন্যান্য দেশ যুক্তরাজ্যের এই পরিকল্পনার সমালোচনা করছে। আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা বলেন, যুক্তরাজ্যের “অভিবাসীদের ফেলে দেওয়ার জায়গা খোঁজা” ধারণা ব্রেক্সিটের আগে অকল্পনীয় ছিল। তার ভাষায়, “আজ এটি শুধু কল্পনাযোগ্যই নয়, বরং বাস্তবায়িত হচ্ছে—এটি প্রমাণ করে ব্রিটেন এখন এক অন্ধকার সময়ে রয়েছে।”

রামা আরও বলেন, “বর্তমান ব্রিটেনে যেসব বিষয় স্বাভাবিকভাবে আলোচিত বা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে, সেগুলোর ৮০ শতাংশই ব্রেক্সিটের আগে লজ্জাজনক বা অগ্রহণযোগ্য হতো।” বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার প্রেসিডেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জেলজকো কোমসিচ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তার দেশ যুক্তরাজ্য থেকে কোনো আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণ করবে না। অন্যদিকে মন্টেনেগ্রোর প্রধানমন্ত্রী মিলোজকো স্পাইচ শর্তসাপেক্ষে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ব্রিটেন যদি তাদের অবকাঠামোয় বড় বিনিয়োগ করে, তাহলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

এদিকে বুধবার লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য পশ্চিম বলকান নেতাদের সম্মেলনের আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য অবৈধ অভিবাসন রোধে যৌথ ব্যবস্থা গঠন করা। তিনি জানান, যুক্তরাজ্য পশ্চিম বলকান দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ “মাইগ্রেশন টাস্কফোর্স” গঠন করছে, যাতে অবৈধ প্রবেশ শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা যায়। এর অংশ হিসেবে ব্রিটিশ ড্রোন ও স্ক্যানার মোতায়েন করা হবে সীমান্ত চেকপয়েন্টগুলোতে।

স্টারমার দাবি করেন, “পশ্চিম বলকান দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে আমরা ইতিমধ্যেই অনিয়মিত সীমান্ত অতিক্রম প্রায় ৫০ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছি। আলবেনিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে মাত্র এক বছরে ছোট নৌকায় আগমন ৯৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই পদ্ধতিই আমরা অন্যান্য বলকান দেশগুলোর ক্ষেত্রেও অনুসরণ করছি।”

তবে যুক্তরাজ্যের “রিটার্ন হাব” পরিকল্পনা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো কঠোর সমালোচনা করেছে। রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন বলেন, “যে দেশে তারা কখনও পা রাখেনি সেখানে পাঠানোর হুমকি মানুষকে আতঙ্কিত করে এবং এতে সহযোগিতার হার কমে যায়। কার্যকর প্রত্যাবাসন নীতি শাস্তিমূলক নয়, বরং মানবিক ও প্রমাণনির্ভর হওয়া উচিত।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে পড়ছে গ্লোবাল লিগ টেবিলে

যুক্তরাজ্যে গাঁজার গন্ধে দমবন্ধ ব্রিটেন, পুলিশ নির্বিকার ভয়ে

গোপনীয়তা ভঙ্গের মামলায় প্রিন্স হ্যারি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন