যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীদের ভিন্নদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা নতুন করে করেছেন। অবৈধ অভিবাসন দমন, নাইজেল ফারাজ ও রিফর্ম পার্টির হুমকি মোকাবিলায় এটি তার সর্বশেষ প্রচেষ্টা।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাজ্যে থাকার সমস্ত সুযোগ শেষ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের ফেরত পাঠানোর জন্য বিদেশে “রিটার্ন হাব” স্থাপন নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এই উদ্যোগ সমালোচনার মুখে পড়েছে—লেবার দলের এমপি, বিরোধী দল ও অধিকারকর্মীরা একে তুলনা করেছেন কনজারভেটিভদের বিতর্কিত রুয়ান্ডা নীতির সঙ্গে। অথচ মাত্র এক বছর আগেই স্টারমার এই রুয়ান্ডা স্কিমকে বাতিল করেছিলেন।
তবে লেবার নেতার এই পরিকল্পনায় সম্ভাব্য ধাক্কা এসেছে যখন আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এদি রামা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, তার দেশ যুক্তরাজ্যের জন্য কোনো “রিটার্ন হাব” হোস্ট করবে না। সরকার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি এই হাবগুলো কোথায় স্থাপিত হবে বা কবে থেকে চালু হবে।
আলবেনিয়া সফরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে স্টারমার বলেন, “যুক্তরাজ্যে যারা পুরো প্রক্রিয়া শেষে থাকার অধিকার হারিয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হিসেবে আমরা ‘রিটার্ন হাব’ নিয়ে কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি। এটি কোনো ম্যাজিক সমাধান নয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন উদ্যোগ।”
তবে তার সঙ্গে থাকা আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী রামা স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা ইতালির সঙ্গে একটি চুক্তিতে আছি, তাই অন্য কোনো দেশের সঙ্গে এমন পরিকল্পনায় যেতে রাজি নই।” অন্যদিকে, রিটার্ন হাব নিয়ে সার্বিয়া, বসনিয়া এবং নর্থ ম্যাসিডোনিয়ার নাম বিবেচনায় থাকার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে অংশীদার দেশের নাম প্রকাশ না করা হলেও ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, ইউরোপের বিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে।
এ ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন চলতি বছরে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীর সংখ্যা ১২,০০০ ছাড়িয়ে গেছে—যা ২০২৫ সালকে রেকর্ড বছর বানাতে পারে।
সোমবার সকালে এক আকস্মিক প্রেস কনফারেন্সে স্টারমার কঠোর অভিবাসন নীতি ঘোষণা করেন এবং সতর্ক করেন, ব্রিটেন “অচেনা মানুষের দ্বীপে” পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
মাত্র কয়েক মাস আগে লেবার সরকার রুয়ান্ডা স্কিম বাতিল করেছিল। যদিও রুয়ান্ডা নীতিতে সফল ও বৈধ আশ্রয়প্রার্থীকেও আফ্রিকান দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল, স্টারমারের রিটার্ন হাব কেবল ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হবে বলে জানানো হয়েছে।
লেবার এমপি ডায়ান অ্যাবট এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, “আগে ছিল অনৈতিক ও অকার্যকর টোরি সরকারের রুয়ান্ডা নীতি, এখন এসেছে লেবার সরকারের ‘রিটার্ন হাব’।”
কনজারভেটিভ নেতা কেমি ব্যাডেনক এই পরিকল্পনাকে রুয়ান্ডা পরিকল্পনার চেয়ে দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন এবং বলেছেন এটি কাজ করবে না। শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলিপ এই সফরকে “লজ্জাজনক” বলেছেন, কারণ আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে রিটার্ন হাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মানবাধিকার সংগঠন ফ্রিডম ফ্রম টর্চার সতর্ক করেছে, স্টারমারের ‘রিটার্ন হাব’ রুয়ান্ডা নীতির মতোই আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করবে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নাটাশা স্যাংগারিডস বলেন, “রুয়ান্ডা পরিকল্পনা নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের ভয়াবহ মানসিক চাপ ও আতঙ্কে রেখেছিল। আজকের স্টারমারের ঘোষণাও একই ধরনের আতঙ্ক তৈরি করবে।”
ডাউনিং স্ট্রিট দাবি করেছে, রিটার্ন হাব চালু হলে করদাতার অর্থ সাশ্রয় হবে। তবে এই পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, কী পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে এবং ফিরিয়ে দেওয়া ব্যক্তিদের কোথায় রাখা হবে—এসব বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেন, “এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, যারা যুক্তরাজ্যে থাকার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে এবং কোনো আইনি অধিকার নেই, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া।”
স্টারমার স্বীকার করেছেন, রিটার্ন হাব ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আগত নৌকা ঠেকাতে পারবে না। তবে এটি অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে মিলিয়ে মানব পাচার চক্র দমনে ভূমিকা রাখবে।
লেবার এমপি র্যাচেল বলেন, “লেবার সরকারকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, বহু মানুষ অত্যাচার থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে আসে। আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, একটি মানবিক ও কার্যকর আশ্রয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।”
স্বাধীন এমপি ও লেবারের সাবেক শ্যাডো হোম সেক্রেটারি জন ম্যাকডনেল বলেন, “অতিরিক্ত কট্টর ভাষায় অভিবাসন নিয়ে আলোচনা করা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত অপরিণত কৌশল।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্টিভ ভ্যালদেজ-সাইমন্ডস বলেন, রিটার্ন হাবের পরিকল্পনা একটি “বিপজ্জনক বিভ্রান্তি”। তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্য তার দায়িত্ব অন্যত্র চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা না করে, সবার দাবি ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকরভাবে প্রক্রিয়া করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।”
উল্লেখ্য যে লেবার সরকারকে কট্টর অভিবাসন নীতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ রিফর্ম ইউকে দল স্থানীয় নির্বাচনে প্রায় ৭০০ আসন দখল করেছে ও সমর্থনে ব্যাপক উত্থান ঘটেছে।
ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, আলবেনিয়া কখনোই রিটার্ন হাব পরিকল্পনার অংশ ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেন, স্টারমারের সফরের আগেই জানা ছিল আলবেনিয়া এই প্রকল্পে অংশ নেবে না।
সূত্রঃ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট
এম.কে
১৬ মে ২০২৫