যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্নাতক কোর্সে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে যুক্তরাজ্যে এই সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল ১,১৫,৭৩০ জন। যা গত বছরের ১১৪,৯১০ জন শিক্ষার্থী থেকে বেশি।
খবরে জানা যায়, এই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যের কঠোর ইমিগ্রেশন নিয়ম সত্ত্বেও স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছে। তাছাড়া অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিদেশী শিক্ষার্থীদের নিয়োগের মানকে হ্রাস করেছে। এর অন্যতম কারণ যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক বেশি চার্জ করা যায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিকট হতে।
ইউসিএএস এর প্রধান নির্বাহী ডঃ জো স্যাক্সটন বলেন, “আন্তর্জাতিক-শিক্ষার্থী অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যা বৃদ্ধি, যুক্তরাজ্যের স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে না। যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর কোর্স অধ্যয়ন করতে আসে তবে তারা ইউসিএএসের ডেটাতে প্রতিফলিত হয় না।”
১৪২ টি উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী ইউনিভার্সিটি ইউকে-র প্রধান নির্বাহী ভিভিয়েন স্টার্ন বিবিসি রেডিও ফোর টুডেকে বলেছেন, সংখ্যা নিয়ে সঠিক পরিস্থিতি আঁচ করা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এখনও চিন্তিত কারণ তারা মনে করে আন্তর্জাতিক-শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এখনও হ্রাস পেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের স্থানীয় শিক্ষার্থীরা স্নাতক শিক্ষার এক বছরের টিউশন ফি’সের জন্য অর্থ প্রদান করবে ৯,২৫০ পাউন্ড।
তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্নাতক কোর্সের জন্য প্রতি বছর ৩৮,০০০ পাউন্ড এবং স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য প্রতি বছর ৩০,০০০ পাউন্ড পরিশোধ করতে হয়।
ইংল্যান্ডে, টিউশন -ফি ক্যাপটি ২০১২ সাল একবার বৃদ্ধি পেয়েছিল যা ৯,০০০ পাউন্ড থেকে বেড়ে ৯,২৫০ পাউন্ডে উন্নিত হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মুদ্রাস্ফীতির সময়ে টিউশন ফি’স নিয়েও উদ্বিগ্ন।
রাসেল গ্রুপ, যারা ২৪ টি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের মতে প্রতিটি স্থানীয় স্নাতক শিক্ষার্থীদের প্রতি বছরের টিউশন ফি হতে প্রায় ২,৫০০ পাউন্ড ঘাটতি হয়ে থাকে।
স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয় কোর্সের প্রতিনিধিত্বকারী উচ্চশিক্ষা পরিসংখ্যান এজেন্সি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, আন্তর্জাতিক-শিক্ষার্থী তালিকাভুক্তির সংখ্যা ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৪,৬৯,১৬০ জন থেকে ২০২০-২১ সালে ৬,৭৯,৯৭০ জনে উন্নীত হয়।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি মাইগ্রেশন রিসার্চ অনুসারে, যুক্তরাজ্যে স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর কোর্সে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি।
তবে, এই বছর মাইগ্রেশন রোধ করার লক্ষ্যে স্টুডেন্ট ভিসায় নতুন নিয়ম আনে যুক্তরাজ্য সরকার। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা গবেষণা কোর্সে না থাকলে বা সরকারী অর্থায়নে বৃত্তি না পেলে শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের আর তাদের সাথে যুক্তরাজ্যে আনতে পারবে না।
গত সপ্তাহে ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অর্থায়নের উপর চাপের লক্ষণগুলি ইতোমধ্যে স্পষ্ট। সম্প্রতি অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি কর্তনের ঘোষণা এসেছে। কারণ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যার কারণে বেতন ও পেনশনের কারণে ধর্মঘট সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকে ব্যাহত করেছে।
উল্লেখ্য যে, ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার প্রতি বছর ৬ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তথ্যমতে শিক্ষাখাত হতে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বড় ফান্ড অর্থনীতিতে বড় সহায়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গত বছর একটি প্রতিবেদনে জানা যায় আগামী অর্থবছরে যুক্তরাজ্য সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এক বছরের টিউশন ফি’স হতে ৪১.৯ বিলিয়ন পাউন্ডের টার্গেট নির্ধারণ করেছে।
এদিকে, ইউসিএএসের তথ্য হতে জানা যায় নার্সিংয়ের জন্য আবেদনকারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। খবরে জানা যায়, এই বিষয়ে রয়্যাল কলেজ অফ নার্সিং পূর্বেই সতর্ক করে দিয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে এনএইচএসকে ভবিষ্যৎ বড় চাপের সম্মুখীন হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থসেবা ও শিক্ষাখাতের বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪