4.3 C
London
February 8, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট সংকট, ছাঁটাই হচ্ছে কর্মী

যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় এক চতুর্থাংশ কর্মী ছাটাই এবং বাজেট কাটছাঁট করছে। এর ফলে সর্বোচ্চ ১০,০০০ পর্যন্ত চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে, যা উচ্চশিক্ষার আন্তর্জাতিক মর্যাদার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

গত এক সপ্তাহে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মী ছাটাই ঘটেছে, যার মধ্যে রাশেল গ্রুপের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাজেট ঘাটতির কারণে সম্মিলিতভাবে ১,০০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে তারা।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৯০টি বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্যতামূলক ও স্বেচ্ছাসেবী ছাঁটাই প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের খরচ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় তার উচ্চ মানের নার্সিং কোর্সেও কাটছাঁট করেছে। এক বিশ্লেষকের মতে, এটি প্রমাণ করে যে “বাজেট সংকট মর্যাদা বা খ্যাতি বিবেচনা করে না।”

রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং (RCN) সতর্ক করে দিয়েছে আর্থিক সংকট নার্সিং কোর্সগুলোকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। যুক্তরাজ্যজুড়ে নার্সিং শিক্ষকদের মধ্যে ছাঁটাই এবং নতুন নিয়োগ বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যখন এই খাতে ৪০,০০০-এর বেশি শূন্যপদ রয়েছে।

RCN ওয়েলসের নির্বাহী পরিচালক হেলেন হুইলি কার্ডিফের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ নার্সিং স্কুল দীর্ঘদিন ধরে উৎকর্ষতার জন্য পরিচিত এবং এখান থেকে দক্ষ ও সহানুভূতিশীল নার্স তৈরি হয়েছে, যারা ওয়েলসজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছেন।”

তিনি আরও বলেন, “এই কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত ওয়েলসের বৃহত্তম স্বাস্থ্য বোর্ডে নিবন্ধিত নার্স সরবরাহের ধারাবাহিকতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে এবং NHS ও সামাজিক সেবার সংকট মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করতে পারে।”

ডরহাম ও কার্ডিফের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ছাঁটাই ঘোষণা করলেও, অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠান গত তিন বছর ধরেই ব্যয়ের চাপ সামলাতে অবিরাম খরচ কমানো ও পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

একজন উপাচার্য মন্তব্য করেন, “এই কাটছাঁটগুলো ধাপে ধাপে হওয়ায় এটি জনগণের দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে। যদি BBC বা John Lewis ৫,০০০-৬,০০০ চাকরি কাটত, তবে এটি নিয়ে সবাই কথা বলত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যা ঘটছে, তা তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না।”

ওয়েলকাম ট্রাস্ট ও রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি সতর্ক করেছে এই কাটছাঁট যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞান গবেষণায় বিশ্ব নেতৃত্ব ধরে রাখার সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে।

২০১৯ সালের পর থেকে স্নাতক পর্যায়ের কেমিস্ট্রি ডিগ্রির সংখ্যা এক চতুর্থাংশের বেশি কমেছে। হাল বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, কেমিস্ট্রি কোর্সের জন্য পর্যাপ্ত আবেদনকারী না থাকায় এটি আর টেকসই নয়, যদিও তাদের র‍্যাংকিং বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ইউনিয়নের (UCU) মহাসচিব জো গ্র্যাডি সরকারকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালকদের উচিত এই ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ থেকে সরে আসা এবং চাকরি রক্ষার জন্য আমাদের সঙ্গে কাজ করা। অন্যথায়, গুরুতর শিল্প ধর্মঘট অবশ্যম্ভাবী।”

ইনস্টিটিউট ফর ফিসকাল স্টাডিজ (IFS) বলছে, ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় ২০১৭ সালের পর থেকে হ্রাস পেয়েছে, যখন কনজারভেটিভ সরকার স্থানীয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি £৯,২৫০-তে স্থির করে এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক ভিসা নীতির পরিবর্তনের কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

আগে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চ A-লেভেল গ্রেডের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করত, তারা এখন দেশীয় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়িয়ে শূন্যস্থান পূরণ করছে। যার ফলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

ওয়ঙ্কহের ডেপুটি এডিটর ডেভিড কার্নোহান বলেন, “এখন স্পষ্ট যে উচ্চ-মর্যাদাসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ভর্তি মানদণ্ড শিথিল করছে, যাতে বেশি শিক্ষার্থী নিতে পারে। ফলে কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরাও এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে, আর যেসব বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত এ ধরনের শিক্ষার্থীদের নিত, তারা ভর্তি সংকটে পড়ছে।”

ইংল্যান্ডের তিন-চতুর্থাংশ বিশ্ববিদ্যালয় আগামী বছরে আর্থিক সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শিক্ষা সচিব ব্রিজেট ফিলিপসন গত বছর ঘোষণা করেছিলেন যে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে থেকে ইংল্যান্ডে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি সামান্য বাড়িয়ে £৯,৫৩৫ করা হবে। তবে, অফিস ফর স্টুডেন্টস (OfS) অনুমান করছে যে, এই ফি বৃদ্ধির পরও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয় খাত £১.৬ বিলিয়ন বাজেট ঘাটতির মুখোমুখি হবে।

ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য পৃথক তহবিল ব্যবস্থা রয়েছে, তবে কার্ডিফ একমাত্র প্রতিষ্ঠান নয় যেটি এই সংকটে ভুগছে। কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট, অ্যাবারিস্টউইথ, গ্লাসগো ও অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ও বাজেট সংকটের কারণে কাটছাঁট করছে।

রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রবার্ট ভ্যান ডি নুর্ট বলেন, উচ্চশিক্ষা খাতের পুনর্গঠন “অনিবার্য” হলেও, কেবল সরকারি তহবিল বৃদ্ধির দিকে তাকিয়ে না থেকে শিক্ষায় ও গবেষণায় নতুন কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, “আমাদের নতুন সাসটেইনেবিলিটি স্কলারশিপ এই বছর শুরু হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের পরিবেশবান্ধব নেতাদের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আকৃষ্ট করবে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্য-সুইজারল্যান্ড বাণিজ্য চুক্তি

জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

লন্ডনের গ্যারেজের সমান দামে বিক্রি হচ্ছে স্কটিশ দ্বীপ!

নিউজ ডেস্ক