যুক্তরাজ্যের কেন্টের র্যামসগেটের কাছে অবস্থিত মানস্টন মাইগ্রান্ট প্রসেসিং সেন্টারে মাদক পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে ২০২৪ সালে মোট ২৯ জন হোম অফিস কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে — যা আগের বছরের তুলনায় ছয় গুণ বেশি।
হোম অফিস জানিয়েছে যে তারা অবৈধ মাদক ব্যবহারের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা নীতি’ অনুসরণ করছে এবং আরও ‘দৃঢ়’ প্রক্রিয়া চালু করেছে।
দ্য গার্ডিয়ান জানায়, এই কেন্দ্রে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ডিঙি নৌকায় করে আসা হাজার হাজার শরণার্থীকে হোম অফিসের কর্মকর্তা ও কন্ট্রাক্টররা দেখাশোনা করেন। নতুন আগত অনেক শরনার্থী দুর্বল ও ট্রমাগ্রস্ত অবস্থায় যুক্তরাজ্যে পৌঁছান।
হোম অফিসের ফ্রিডম অব ইনফরমেশন আইনে গার্ডিয়ান যে তথ্য পেয়েছে, তাতে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে ক্যানাবিস, কোকেইন, অ্যাম্ফেটামিন এবং প্রেসক্রিপশনবিহীন ট্রামাডলসহ নানা ধরনের মাদক সেবনের কারণে ২৯ জন কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫ বা তার কম।
তথ্য অনুযায়ী, বছরে দুই হাজারের বেশি হোম অফিস স্টাফ, কন্ট্রাক্টর ও সাব-কন্ট্রাক্টর মানস্টন সাইটে কাজ করেন, তবে তাদের মধ্যে কতজন নতুন আসা ব্যক্তিদের তত্ত্বাবধানে থাকা ডিটেনশন কাস্টডি অফিসার তা স্পষ্ট নয়। প্রতি শিফটে কয়েকশো কর্মী কাজ করেন বলে ধারণা করা হয়।
যেসব কর্মী অবৈধ মাদক গ্রহণে ধরা পড়েন, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত না করে প্রথমে সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করে তদন্ত করা হয়। তারা আপিল করার এবং স্বতন্ত্রভাবে নমুনা বিশ্লেষণের সুযোগ পান।
হোম অফিসের এক সূত্র জানায়, সাইটে থাকা দুর্বল অবস্থায় থাকা মানুষের সুরক্ষার জন্য এলোমেলো ও গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক মাদক পরীক্ষা চালানো হয়। ইতিবাচক ফল পেলে বরখাস্তের পাশাপাশি ডিটেনশন কাস্টডি অফিসার হিসেবে স্বীকৃতি প্রত্যাহার করা হয়।
প্রিজন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী মহাসচিব অ্যান্ডি বাক্সটার বলেন: “পিওএ কর্মক্ষেত্রে মাদক সেবনের কোনোভাবেই পক্ষে নয়। তবে আমরা নিয়োগকর্তাকে আহ্বান জানাই, মাদক ব্যবহারকারীদের উপযুক্ত পেশাগত সহায়তা দেওয়া হোক।”
এটাই প্রথম নয় যে মানস্টন সেন্টারে মাদক সংক্রান্ত বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে গার্ডিয়ান জানিয়েছিল, মাদক নিয়ে অভিযোগের কারণে কিছু গার্ডকে সাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। শরণার্থীরা অভিযোগ করেছিল, কিছু স্টাফ তাদের মাদক বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল, আবার কিছু স্টাফ অভিযোগ করেছিল, তাদের সহকর্মীরা ডিউটির সময় মাদক নিচ্ছিল।
তখন হোম অফিস জানায়: “ঘটনায় জড়িতদের তাৎক্ষণিকভাবে সাইট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরো কঠোর পদক্ষেপ চালিয়ে যাওয়া হবে।”
তবে নতুন তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে কাউকে মাদক সেবনের কারণে বরখাস্ত করা হয়নি।
মানস্টন সাইটটি ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে মারাত্মক ভিড়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ডিপথেরিয়া ও স্ক্যাবিসের প্রাদুর্ভাব এবং এক ব্যক্তির মৃত্যুসহ নানা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। সে সময় ১৬০০ জনের ধারণক্ষমতার কেন্দ্রে ৪০০০-এর বেশি মানুষকে রাখা হয়েছিল। এসব ঘটনার তদন্ত এখন শুরু হয়েছে।
চ্যারিটি সংস্থা মেডিকেল জাস্টিস-এর পরিচালক এমা গিন বলেন: “যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যুক্তরাজ্যে এসে আটক হয়েছেন, তাদের যত্ন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের ওপর, সেই কর্মীদের মধ্যে বেআইনি মাদক সেবনের হার আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে।”
হোম অফিসের মুখপাত্র বলেন: “আমরা মাদক ব্যবহারের ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করি। আরও কঠোর পদ্ধতি এবং পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করছি যে, মানস্টন সাইটে থাকা অভিবাসীদের সঠিক যত্ন নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
অন্য এক ঘটনায়, গত মাসে হোম অফিস সূত্র নিশ্চিত করেছে, মানস্টন সাইটে এক ব্যক্তি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না, কারণ সাধারণত নতুন আগতদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্থানান্তর করা হয়।
এই বিষয়ে হোম অফিসের মুখপাত্র বলেন: “মানস্টন এবং আমাদের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার অন্যান্য অংশে আটক ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের যত্নের দায়িত্ব সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৫ মে ২০২৫