TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের ‘রিটার্ন হাব’ পরিকল্পনা, আলোচনায় রাজি কসোভো

যুক্তরাজ্য সরকার এমন একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যার আওতায় ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানোর আগে বিদেশে স্থাপিত ‘রিটার্ন হাব’-এ রাখা হবে। দ্য টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, কসোভোসহ নয়টি দেশ এই হাব স্থাপনের সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য—যারা সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া ব্যর্থ করে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছে, তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানো এবং যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরে থাকার সুযোগ বন্ধ করা।

এই পরিকল্পনার বিষয়টি সামনে আসার পর কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভজোসা ওসমানি স্কাই নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, এখনো যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি। তবে তার দেশ আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। তিনি বলেন, “আমরা এখনো এমন কোনো অনুরোধ পাইনি। তবে প্রস্তাব আসলে আমরা তা বিবেচনা করতে প্রস্তুত।”

প্রেসিডেন্ট ওসমানি আরও জানান, যুক্তরাজ্য কসোভোর জন্য দীর্ঘদিনের মিত্র, এবং ব্রিটিশ প্রযুক্তি বর্তমানে কসোভো ব্যবহার করছে অবৈধ পণ্য ও মানবপাচার ঠেকাতে।

প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, যুক্তরাজ্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে রিটার্ন হাব স্থাপন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এসময় তিনি বলেন, এসব হাব এমন ব্যক্তিদের জন্য, যারা যুক্তরাজ্যে থাকার সকল আইনি সুযোগ শেষ করে ফেলেছে কিন্তু বিভিন্ন কৌশলে ফেরত যাওয়া বিলম্বিত করছে—যেমন কাগজপত্র “হারিয়ে ফেলা”।

রিটার্ন হাবের মাধ্যমে সরকারের উদ্দেশ্য হলো আশ্রয় হোটেল বন্ধ করা এবং অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা। প্রধানমন্ত্রী একে “গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি সরকারের বর্তমান অভিবাসন-নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির একটি সহায়ক অংশ।

তবে এই পরিকল্পনার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীদলীয় রাজনীতিকরা। কনজারভেটিভ দলের ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ বলেন, “এই পরিকল্পনা কার্যকর হবে না, কারণ যেসব ব্যক্তি অবৈধভাবে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন, তাদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত আশ্রয় পেয়ে যান। ফলে তারা কখনোই এই রিটার্ন হাবের আওতায় পড়বেন না।”

আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তাদের কোনো হাব স্থাপনের চুক্তি নেই এবং ইতালির সঙ্গে হওয়া চুক্তি ছিল একটি বিশেষ ক্ষেত্রভিত্তিক ‘একবারের’ সমঝোতা। এতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েন।

পশ্চিম বলকান অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপে অবৈধ অভিবাসনের একটি রুট হিসেবে পরিচিত। শুধু গত বছরই প্রায় ২২,০০০ মানুষ এই রুট ব্যবহার করে ইউরোপে প্রবেশ করে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের মতে, এই অঞ্চলের ছয়টি দেশ—ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টেনেগ্রো, আলবেনিয়া, কসোভো ও উত্তর ম্যাসিডোনিয়া—যুক্তরাজ্যের অবৈধ অভিবাসন দমন নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

২০২৫ সাল ইতিমধ্যেই অবৈধ ছোট নৌকা পারাপারের জন্য রেকর্ড-ব্রেকিং বছরের পথে। এ বছর এখন পর্যন্ত ১২,০০০ এর বেশি মানুষ ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে। ক্ষমতায় আসার সময় লেবার পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ‘মানবপাচারকারী গ্যাং ধ্বংস’ করার, ফলে এই সংকট তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্রঃ স্কাই নিউজ

এম.কে
২৭ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য হোটেল সুবিধা বাতিলের ঘোষণা

লন্ডন পুলিশের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী, নারী ও সমকামীতা বিদ্বেষীর তকমা

ব্রিটেনে দেউলিয়া হওয়ার পথে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের ৩ কোম্পানি

নিউজ ডেস্ক