যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (NHS) নিয়ে আবারও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, এবার এক নারী রোগীর শরীরে অস্ত্রোপচারের সময় ভাঙা ছুরির টুকরো থেকে যাওয়ার ঘটনায়। ৪৪ বছর বয়সী জেন হার্ভি বর্তমানে সংশ্লিষ্ট NHS ট্রাস্টের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে পেটের একটি হিস্টেরেকটমি (জরায়ু অপসারণ) অস্ত্রোপচারের সময় সার্জনের একটি ব্লেডের টিপ ভেঙে গিয়ে তা হার্ভির শরীরের ভেতরে থেকে যায়। অপারেশন থিয়েটারের কেউ বিষয়টি লক্ষ্য করেননি, এমনকি পরবর্তীতে করা এক্স-রেতেও তা ধরা পড়েনি। পরে আরও একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেই অংশটি বের করতে হয়, ফলে রোগীকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে মারাত্মক ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।
হার্ভি জানিয়েছেন, তিনি “আতঙ্কিত এবং বিধ্বস্ত ” হয়ে পড়েন, এবং দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন। তিনি ভুগছেন আতঙ্কে, ঘুমের সমস্যা, খাওয়ার অনীহা এবং চিকিৎসকদের প্রতি আস্থাহীনতায়।
আইনি প্রতিষ্ঠান লাইম সলিসিটর’স এর মাধ্যমে দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয়েছে, কেবল অস্ত্রোপচার নয়, বরং সার্জিকাল যন্ত্রপাতির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে NHS-এর চরম ব্যর্থতাই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
আইনজীবী ইখিরা থান্ডি বলেন, “ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও অপারেশন-পরবর্তী তদারকির ব্যর্থতা রোগীদের জন্য চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
ত্রুটির জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক পরবর্তীতে ক্ষমা চেয়ে বলেন, ছুরির মাথা ভেঙে যাওয়ার কারণ ছিল উৎপাদনজনিত ত্রুটি। তবে লাইম সলিসিটর’সের মেডিকেল নেগলিজেন্স প্রধান জেমস অ্যান্ডারসনের মতে, “এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। NHS-এ এই ধরণের বিপজ্জনক সরঞ্জাম ব্যবহার রোগীদের জন্য প্রতিনিয়ত ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।”
এ ঘটনা সামনে আসার পর নিউক্যাসল ও নর্থ টাইন্সাইডের সিনিয়র কোরোনার জর্জিনা নোলান আরও একটি মৃত্যুর তদন্তে NHS-এর সরঞ্জাম সংকট এবং বিকল্প নিম্নমানের যন্ত্র ব্যবহারের ফলে রোগীর মৃত্যুর বিষয় তুলে ধরেন।
৬৬ বছর বয়সী মাইকেল ওয়ালটন হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচারের সময় পছন্দের ক্যানুলা না থাকায় বিকল্প ছোট টিপযুক্ত ক্যানুলা ব্যবহার করা হয়, যা পরে সরিয়ে গিয়ে ব্রেনে অক্সিজেনের অভাব ঘটায় এবং তার মৃত্যু ঘটে। কোরোনার রিপোর্টে বলা হয়, “ত্রুটিপূর্ণ বা উপযুক্ত নয় এমন সরঞ্জাম ব্যবহার একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও জীবনঘাতী হতে পারে।”
এই ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, NHS-এ সরঞ্জাম সরবরাহ ব্যবস্থায় সংস্কার, মান নিয়ন্ত্রণ জোরদার, এবং রোগী সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার সময় এখনই।
(*নাম পরিবর্তিত)
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৯ জুন ২০২৫