যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা চাইলে একজন আশ্রয়প্রার্থী সাধারণত দুটি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়েন—শরণার্থী মর্যাদা অথবা মানবিক সুরক্ষা। উভয় মর্যাদার মেয়াদই পাঁচ বছর এবং উভয়ের সাথেই কাজ, পড়াশোনা, স্বাস্থ্যসেবা ও সুবিধাভোগের অধিকার মেলে। তবে আইনি কাঠামো এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকারগত পার্থক্যের কারণে শরণার্থী মর্যাদা তুলনামূলকভাবে বেশি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সুরক্ষা প্রদান করে।
আশ্রয়ের আবেদন পর্যালোচনার সময় প্রথমেই হোম অফিস দেখে আবেদনকারী শরণার্থী মর্যাদার উপযোগী কিনা। শরণার্থী কনভেনশনের আওতায় কেউ যদি জাতিগত, ধর্মীয়, রাজনৈতিক মত বা নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার কারণে নিজ দেশে নিপীড়নের আশঙ্কায় থাকেন এবং সেজন্য নিজ দেশের সুরক্ষা নিতে না পারেন, তবে তিনি শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হন। শর্ত থাকে, তিনি যেন যুক্তরাজ্যে থাকেন বা সীমান্তে উপস্থিত থাকেন এবং নিরাপত্তা বা অপরাধজনিত কারণে অযোগ্য না হন।
শরণার্থী মর্যাদা পেলে পাঁচ বছরের ‘লিভ টু রিমেইন’ দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে তারা কাজ করতে পারেন, শিক্ষা নিতে পারেন এবং NHS ও সরকারি বেনিফিট পেতে পারেন। তারা পরিবার পুনর্মিলনের আবেদনও করতে পারেন এবং পাঁচ বছর পর স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ পান।
যদি কেউ শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি না পান, তবে হোম অফিস বিবেচনা করে তিনি মানবিক সুরক্ষার উপযুক্ত কিনা। এটি সাধারণত প্রযোজ্য হয় যদি কেউ নির্যাতন, মৃত্যুদণ্ড, অবৈধ হত্যাকাণ্ড বা যুদ্ধজনিত সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকেন, কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে শরণার্থী কনভেনশনের কোনো ‘নির্দিষ্ট কারণ’ প্রযোজ্য না হয়। যেমন—সিরিয়া বা ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসা সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে।
মানবিক সুরক্ষা পাওয়ার পরেও পাঁচ বছরের থাকার অনুমতি, কাজ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়। পরিবার পুনর্মিলনের সুযোগও থাকে এবং পরবর্তীতে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করা যায়। তবে কিছু দিক থেকে এই মর্যাদাটি দুর্বল।
শরণার্থীরা কনভেনশন ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট পেতে পারেন, যা তাদের নিজ দেশের পাসপোর্ট ছাড়াই অন্যান্য দেশ ভ্রমণের সুযোগ দেয়। অপরদিকে মানবিক সুরক্ষাপ্রাপ্তদের নিজ দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হয় বা কঠিন শর্তে ‘সার্টিফিকেট অব ট্র্যাভেল’ নামে একটি ভ্রমণ নথির জন্য আবেদন করতে হয়। অনেক সময় এই নথি তেমন কার্যকর হয় না কারণ অধিকাংশ দেশ এটি গ্রহণ করে না।
শরণার্থীদের পরিবারের সদস্যরা যদি ডমোস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হন, তারা নির্দিষ্ট নিয়মে স্থায়ী বাসস্থানের আবেদন করতে পারেন। মানবিক সুরক্ষাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এই আইনি সুরক্ষা নেই, ফলে সহিংসতার শিকার সঙ্গীরা বিপদে পড়েন।
এছাড়াও, শরণার্থীদের স্ট্যাটাস বাতিল করার উদ্যোগ নিলে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থাকে অবহিত করতে হয় এবং তাদের মতামত নিতে হয়। মানবিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যার ফলে এ মর্যাদা অপেক্ষাকৃত দুর্বল আন্তর্জাতিক নজরদারির আওতায় পড়ে।
সব মিলিয়ে, যদিও দৈনন্দিন জীবনে শরণার্থী মর্যাদা ও মানবিক সুরক্ষা প্রায় একই সুবিধা দেয়, তবে আইনগত কাঠামো, ভ্রমণ ও পারিবারিক সুরক্ষায় শরণার্থী মর্যাদা অধিকতর নিরাপদ ও সুসংহত। এসব কারণেই ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্য সরকার সিরীয় মানবিক সুরক্ষাপ্রাপ্তদের শরণার্থী মর্যাদায় উন্নীত করে।
সূত্রঃ ফ্রি মুভমেন্ট
এম.কে
১৮ জুন ২০২৫