আজকের ডিজিটাল যুগে ল্যাপটপ শুধু কাজের যন্ত্র নয়—এটি আমাদের স্মৃতি, ডকুমেন্ট, ব্যক্তিগত ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভাণ্ডার। কিন্তু হঠাৎ করে সেটি হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, ব্যক্তিগত ও পেশাগতভাবে বড় বিপদে পড়তে হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে কী করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে কী প্রস্তুতি নেবেন, তা জানা জরুরি। এই গাইডে আপনি পাবেন সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—সংক্ষেপে, পরিষ্কারভাবে।
১. খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন
আপনার ল্যাপটপটি মাইক্রোসফট বা অ্যাপলের ‘ফাইন্ড মাই’ সেবার মাধ্যমে ট্র্যাক করার চেষ্টা করুন। দূর থেকে লক করুন এবং ‘হারানো’ হিসেবে চিহ্নিত করুন, যাতে ডেটা সুরক্ষিত থাকে।
২. নির্ভরযোগ্য ডিভাইস তালিকা থেকে সরান
আপনার মাইক্রোসফট বা অ্যাপল অ্যাকাউন্ট, ক্লাউড সেবা, অনলাইন শপ ও ব্রাউজার ভিত্তিক অ্যাপে ল্যাপটপটিকে ট্রাস্টেড ডিভাইস তালিকা থেকে মুছে ফেলুন।
৩. গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন
প্রথমেই ইমেইলের পাসওয়ার্ড বদলান, কারণ হ্যাকাররা সেটি ব্যবহার করে অন্য অ্যাকাউন্টে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। এরপর অ্যাপল বা মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টসহ সব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
৪. পুলিশকে জানান
যুক্তরাজ্যে ১০১ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে চুরির ঘটনা জানান। ল্যাপটপের বিবরণ (মডেল, রঙ, সিরিয়াল নম্বর ইত্যাদি) দিন। সিরিয়াল নম্বর বক্সে বা অনলাইন অ্যাকাউন্টে পাওয়া যেতে পারে।
৫. ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে জানান
আপনার হোম কনটেন্টস ইন্স্যুরেন্স থাকলে, সেটির আওতায় ল্যাপটপ পড়ে থাকতে পারে। চুরির রিপোর্ট দিন।
৬. ব্যাংককে সতর্ক করুন
যদি ল্যাপটপে ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত কোনো তথ্য সংরক্ষিত থাকে, তাহলে ব্যাংককে অবহিত করুন।
৭. প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে জানিয়ে দিন
ল্যাপটপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে চুরির ঘটনা জানান, যাতে তারা সিরিয়াল নম্বর ব্ল্যাকলিস্ট করতে পারে এবং অন্য কেউ সেটি চালু করতে না পারে।
নতুন ল্যাপটপ পেলে কী করবেনঃ
১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিন ও নিরাপত্তা সেট করুন
সহজে অনুমান করা যায় না এমন একটি পাসওয়ার্ড বা দীর্ঘ পিন কোড সেট করুন। ফেস আইডি বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার চালু করুন এবং স্বল্প সময় পরেই স্ক্রিন লক হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখুন।
২. ডিভাইস এনক্রিপশন চালু করুন
প্রাইভেসি সেটিংসে গিয়ে এনক্রিপশন (ডেটা লক) চালু করুন, যদি আগে থেকেই না থাকে।
৩. দুই ধাপের নিরাপত্তা চালু করুন
আপনার অ্যাপল, মাইক্রোসফট বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখুন।
৪. ‘ফাইন্ড মাই’ ফিচার চালু করুন
উইন্ডোজ ১০/১১-এ Find My Device এবং ম্যাকে iCloud Find My Mac চালু করে দিন, যাতে ভবিষ্যতে হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
৫. নিয়মিত ব্যাকআপ নিন
উইন্ডোজ ব্যবহার করলে Windows Backup দিয়ে অনলাইনে OneDrive-এ ফাইল সংরক্ষণ করুন। ম্যাক হলে Time Machine ব্যবহার করে এক্সটারনাল ড্রাইভে ব্যাকআপ নিতে পারেন বা iCloud-এ ফাইল সিঙ্ক করুন। সংবেদনশীল ডেটা থাকলে আগে ড্রাইভ এনক্রিপ্ট করুন।
৬. ক্লাউডে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট রাখুন
Microsoft OneDrive, Apple iCloud ছাড়াও Google Drive, Dropbox, Proton Drive ইত্যাদি সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ফাইল রাখুন।
৭. ল্যাপটপের বিবরণ সংরক্ষণ করুন
ল্যাপটপের রঙ, মডেল নম্বর, সিরিয়াল নম্বর লিখে রাখুন এবং কেনার রশিদ বা প্রমাণপত্র নিরাপদ জায়গায় রাখুন।
৮. ইন্স্যুরেন্সে যুক্ত করুন
আপনার হোম ইন্স্যুরেন্সে ল্যাপটপটি আলাদাভাবে যুক্ত করুন, বিশেষত যদি সেটি নিয়মিত বাইরে নিয়ে যান। চাইলে আলাদা ল্যাপটপ বা গ্যাজেট ইন্স্যুরেন্সও নিতে পারেন।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
২৯ মে ২০২৫
এম.কে