ব্রিটেনের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর ব্রিস্টলে আবাসন সংকট এতটাই তীব্র যে বহু মানুষ স্থায়ী ঘরের পরিবর্তে ভ্যান ও ক্যারাভ্যানকে বেছে নিচ্ছেন তাদের একমাত্র আশ্রয় হিসেবে। শহরের বিভিন্ন রাস্তা, বিশেষ করে ‘দ্য ডাউনস’ এলাকায় সারি সারি ভ্যান এখন মানুষের স্থায়ী আবাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্রিস্টল সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, বর্তমানে ২২,০০০-এর বেশি পরিবার সামাজিক আবাসনের জন্য অপেক্ষমাণ। শহরে গড় ভাড়া মাসে £১,৭৫৩—যা সাধারণ চাকুরিজীবীদের জন্য প্রায় অসম্ভব।
৬৩ বছর বয়সী মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী ড্যারেন জানান, দীর্ঘদিন ভ্যানে বসবাস করছেন তিনি। নিজের দুই সন্তানের খরচ মেটাতে ঘর ছেড়ে ক্যারাভ্যানে জীবন শুরু করেন। একই অভিজ্ঞতা রয়েছে বহু পেনশনভোগী, একক মা, বেকার বা অল্প আয় করা মানুষের।
১৬ বছর ধরে একই বাড়িতে বসবাসের পর হঠাৎ ‘সেকশন ২১’ নোটিশে উচ্ছেদ হওয়া এক নারী বলেন, ভাড়া বাড়ির সংকট, শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি বিশাল আবাসন প্রকল্প এবং কর্পোরেটদের আগমনে শহর থেকে সাধারণ মানুষ বিদায় নিচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, “শহর কি শুধু ধনীদের জন্য?”
চমকপ্রদভাবে, এমনকি উচ্চ আয়ের পেশাজীবীরাও আজ ক্যারাভ্যানে বাস করছেন। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ক্রেইগ কলিয়ার বছরে £৬০,০০০ আয় করেও ঘর ভাড়া নিতে অপারগ। তিনি বলেন, “এভাবে থাকার মাধ্যমে আমি আরও নিরাপদ ও স্বাধীন। ভাড়া বাড়িতে কোনো অধিকার থাকে না।”
ব্রিস্টলে বসবাসরত ৬৮ বছর বয়সী সাবেক কেয়ারওয়ার্কার আলি এজলি বলেন, “ভাড়া বাড়ির ভবিষ্যৎ এতটাই অনিশ্চিত যে আমি নিজেই একটা ভ্যান কিনেছি। এটা ভবিষ্যতের প্রস্তুতি।”
তবে এই চলমান জনগোষ্ঠী নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগও বাড়ছে। কিছু বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, এলাকায় অস্বাস্থ্যকর অবস্থা, অসামাজিক আচরণ, এমনকি যৌন হয়রানির মতো ঘটনাও ঘটছে। তবে কাউন্সিল জানিয়েছে, এসব অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ এখনো মেলেনি।
ভ্যানবাসীরা পাল্টা অভিযোগ করে বলছেন, স্থানীয়রা তাদের হয়রানি করছেন, গাড়িতে আগুন জ্বালানো, আতশবাজি নিক্ষেপসহ নানা হুমকির মুখে তারা রয়েছেন। কেউ কেউ জানান, পুলিশ তাদের ‘কাউন্টার-সারভেইল্যান্স’ করার পরামর্শ দিয়েছে।
ব্রিস্টল সিটি কাউন্সিলের হাউজিং কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারি পারসন্স জানান, শহরের ভ্যানবাসীরা মূলত দীর্ঘদিনের বাসিন্দা, যাদের আবাসন সংকটই এই অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাই তাদের পাশে দাঁড়ানোই মানবিক দায়িত্ব।
তিনি জানান, শহরজুড়ে “মিনহোয়াইল সাইট” চালুর পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে ভ্যানবাসীরা পানীয় জল, টয়লেট ও বর্জ্য নিষ্কাশনের সুবিধা পাবেন। তিনি বলেন, “আমরা যতদিন না কার্যকর জাতীয় আবাসন নীতি নিতে পারবো, ততদিন এই সংকট চলতেই থাকবে।”
লেবার পার্টির হাউজিং সেক্রেটারি অ্যাঞ্জেলা রেইনার ইতোমধ্যে ৩ লাখ নতুন সামাজিক ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার ৬০% থাকবে সাশ্রয়ী ভাড়ার আওতায়।
এই মুহূর্তে ব্রিস্টলের রাস্তায় গড়ে উঠছে এক ‘চলন্ত শহর’। স্বাধীনতা নয়, অনেকের জন্য তা শেষ আশ্রয়। ঘর না থাকলেও বেঁচে থাকার তাগিদেই তারা বেছে নিয়েছেন ক্যারাভ্যানকে, শহরের বাতাসে যেন আজ একটাই প্রশ্ন ঘুরছে—“আশ্রয় কি বিলাসিতা হয়ে গেছে?”
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে
১৯ জুলাই ২০২৫