যুক্তরাজ্যে আটক ৩০ জন আশ্রয়প্রার্থী হোম অফিসের বিতর্কিত ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ প্রত্যাবাসন নীতির বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগকে বৃহস্পতিবার জোরপূর্বক ফ্রান্সে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই অনশন দ্রুতই ডিটেনশন সেন্টারগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
হোম অফিসের এই নীতির আওতায় এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য থেকে একশ’র বেশি মানুষকে জোরপূর্বক ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছে, বিনিময়ে সীমিত সংখ্যক শরণার্থীকে আইনি পথে দেশে আনা হয়েছে। ছোট নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা কমাতেই এই নীতি চালু করা হয়। কিন্তু সমালোচকদের মতে, এটি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক শরণার্থী কনভেনশনের মৌলিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অনশনে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি জানান, একই নৌকায় ৮৩ জন যাত্রী থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে মাত্র ১২ জনকে ডিটেনশনে পাঠানো হয়েছে, বাকিরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আশ্রয় আবেদন করছেন এবং হোটেলে অবস্থান করছেন। “আমরা দিনের পর দিন তথ্যের জন্য অপেক্ষা করেছি, কোনো উত্তর পাইনি। অপরাধী না হয়েও আমাদেরকে অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে,”—বলেন তিনি।
আরেকজন অনশনকারী জানান, আটক হওয়ার পর থেকে তার জীবন থমকে গেছে। ফ্রান্সে বা নিজের অরক্ষিত দেশে ফেরত পাঠানোর ভয় তার প্রতিদিনের সঙ্গী। তৃতীয় এক আশ্রয়প্রার্থী বলেন, “আমরা এই দেশে এসেছি সুরক্ষার জন্য, কোনো অপরাধ করতে নয়। আমরা স্বাভাবিক মানুষ, শুধু মানবাধিকার ও স্বাধীনতা চাই।”
অনশনকারীদের সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা বেল ফর ইমিগ্রেশন ডিটেইনিজ উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, অনেক আশ্রয়প্রার্থীরই পর্যাপ্ত আইনি সহায়তার প্রবেশাধিকার নেই। সংস্থার পরিচালক শার্লট বাকলি বলেন, “১৯৫১ সালের শরণার্থী সনদে আশ্রয় চাওয়ার অধিকার স্পষ্টভাবে সুরক্ষিত। কিন্তু যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই মানুষকে আটক করে ফেলা মানবাধিকারের পরিপন্থী।” তিনি অনশনকারীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হোম অফিসকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে হোম অফিস জানায়, তারা অননুমোদিতভাবে থাকা ব্যক্তিদের ফেরত পাঠানোর কাজ দ্রুততর করছে এবং এ বছর প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে দেশ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। একজন মুখপাত্র বলেন, “ডিটেনশন ও অপসারণের পুরো প্রক্রিয়া মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়।”
অনশন চলমান থাকায় ডিটেনশন সেন্টারগুলোর মানবিক অবস্থা, আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকার এবং হোম অফিসের নীতি নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিতে পারে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

