14.5 C
London
May 8, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসনে লুকানো “লাভের খেলা”

যুক্তরাজ্যের আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা চালাতে আগামী এক দশকে ব্যয় হতে পারে ১৫ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি—যা হোম অফিসের পূর্বাভাসের তিনগুণ, সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

কনজারভেটিভ সরকার ২০১৯ সালে তিনটি কোম্পানির সঙ্গে এক দশকের জন্য ৪.৫ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে চুক্তি করে। হোম অফিস জানিয়েছে, লেবার সরকার একটি বিশৃঙ্খল আশ্রয় ব্যবস্থা আগের সরকারের নিকট হতে পেয়েছে, যেখানে আবেদনকারীরা দীর্ঘ সময় ধরে আটকে আছেন।

তবে জাতীয় নিরীক্ষা অফিসের (NAO) প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে এ ব্যয় ১৫.৩ বিলিয়ন পাউন্ডে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই প্রতিবেদনটি পার্লামেন্টের ক্রস-পার্টি হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির অনুরোধে তৈরি হয়েছে, যারা আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে একটি তদন্ত পরিচালনা করছে। প্রতিবেদনটি গত বুধবার প্রকাশিত হয়।

প্রথমবারের মতো, প্রতিবেদনে তিনটি আবাসন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের—ক্লিয়ারস্প্রিংস, সার্কো এবং মিয়ার্স—লাভের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই তিন কোম্পানি চুক্তি থেকে মোট ৩৮৩ মিলিয়ন পাউন্ড লাভ করেছে। চুক্তিটি ২০২৯ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

হোম অফিস এই চুক্তিতে ব্যর্থতার জন্য অর্থ কেটে নেওয়ার অধিকার রাখে, তবে এখন পর্যন্ত তারা মোট কন্ট্রাক্টের এক শতাংশেরও কম অর্থ কেটেছে। তাছাড়া চুক্তিতে বড় বড় আবাসন স্থানের কার্যকারিতা পরিমাপ করার কোনো ব্যবস্থা নেই।

২০২৪/২৫ অর্থবছরে হোটেল আবাসনের খরচ ছিল আশ্রয় চুক্তির মোট বার্ষিক ব্যয়ের ৭৬%, অথচ এটি কেবল ৩৫% আশ্রয়প্রার্থীর বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে।

মহামারির শুরুতে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য হোটেল ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বর্তমান সরকার হোটেল ব্যবহার বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, NAO প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে ২০২৫ সালের শুরুতেও ২২২টি হোটেলে এখনো প্রায় ৩৮,০০০ মানুষ বাস করছে। শেয়ার আবাসনের রাতপ্রতি খরচ যেখানে জনপ্রতি £১৪.৪১, সেখানে হোটেলে রাতপ্রতি একজনের খরচ £১৪৫ পাউন্ড।

এই হোটেলগুলো কট্টর ডানপন্থীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল বলেও জানা যায়। আশ্রয়প্রার্থীরা, হোম অফিসের পক্ষ থেকে হাউজিং পেয়ে থাকেন, অনেক আশ্রয়প্রার্থী জানান তারা জেলে রয়েছেন এমন একটা পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন।

কমিটির চেয়ার ডেম ক্যারেন ব্র্যাডলি বলেন: “আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসনের খরচ সামাল দেওয়া সরকারের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। NAO প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এই খরচগুলো প্রথমে যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তার তিনগুণ বেশি হতে চলেছে।

আমরা পরবর্তী সপ্তাহে আবাসন প্রদানকারীদের সঙ্গে কথা বলব, তাদের ভূমিকা, খরচ বৃদ্ধি এবং গুণগত মান বোঝার জন্য। এছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পারফরম্যান্স সূচকে ব্যর্থতা নিয়ে তাদের জবাবদিহি করব।”

মিয়ার্সের এক মুখপাত্র বলেন: “আশ্রয় ও সহায়তা প্রদান চুক্তিতে লাভের সীমা নির্ধারিত রয়েছে। মিয়ার্সের অপারেটিং মার্জিন ৫%-৬%, যা অন্যান্য খাতের তুলনায় কম এবং ক্লায়েন্টদের জন্য ভালো মূল্যমান নিশ্চিত করে।”

হোম অফিসের মুখপাত্র বলেন: “এই প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে আমরা একটি বিশৃঙ্খল আশ্রয় ব্যবস্থা আগের সরকারের নিকট হতে পেয়েছিলাম, যেখানে হাজার হাজার আবেদনকারী জটের মধ্যে আটকে ছিলেন, দাবি নিষ্পত্তি হচ্ছিল না, এবং চুক্তিগুলো ছিল অসম্পূর্ণ —যা কোটি কোটি পাউন্ড করদাতার অর্থ নষ্ট করছিল।

আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি—আশ্রয় দাবি নিষ্পত্তির হার ৫২% বৃদ্ধি করেছি এবং ২৪,০০০ অবৈধ অভিবাসীকে সরিয়ে দিয়েছি ইউকে হতে। ফলে নির্বাচনের পর আশ্রয় হোটেলের সংখ্যা এখন সর্বনিম্ন। আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া দ্রুত করে এবং নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে এনে হোটেল ব্যবহার বন্ধ করব এবং ২০২৬ সালের মধ্যে করদাতার ৪ বিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করব বলে আশা করা যাচ্ছে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৮ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

ইংল্যান্ডে লকডাউন প্রত্যাহার ১৯ জুলাই

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার বাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন, সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর বন্ধ

যুক্তরাজ্য জোড়ে ফিলিস্তিনপন্থীদের পদযাত্রা ও বিক্ষোভের ডাক