যুক্তরাজ্যে এ বছর গ্রীষ্মে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ হারে উষ্ণতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে সতর্ক করেছে মেট অফিস। দীর্ঘমেয়াদি তিন মাসের আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল হতে পারে অতীতের গরম গ্রীষ্মের চেয়েও বেশি তাপদায়ক।
গত শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে শুষ্ক এবং রৌদ্রোজ্জ্বল বসন্ত পার করেছে যুক্তরাজ্য। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত রেকর্ড ৬৩০ ঘণ্টা রোদ উঠেছে, যা ইতিহাসে প্রথম। গত শনিবার হিথ্রোতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস—গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৮ ডিগ্রি বেশি। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ঘাসের পরাগরেণুর মাত্রাও ছিল চরম পর্যায়ে।
মেট অফিসের মুখপাত্র নিকোলা ম্যাক্সি বলেন, “এই পূর্বাভাস সাধারণ জনসাধারণের দৈনন্দিন পরিকল্পনার জন্য নয়, বরং এটি একটি ঝুঁকি মূল্যায়ন, যা সরকার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবহাওয়াজনিত প্রস্তুতির জন্য সহায়তা করে।”
তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকেতগুলো এ সময় দুর্বল হলেও যুক্তরাজ্যের উষ্ণায়ন পরিস্থিতি এবং সাম্প্রতিক গ্রীষ্মকালীন ধারার সঙ্গে মিল রেখে এই বছর তাপমাত্রা গড়ের তুলনায় বেশি থাকবে বলে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, আবহাওয়াগত গ্রীষ্মে (১ জুন – ৩১ আগস্ট) যুক্তরাজ্যে গরম পড়ার সম্ভাবনা বর্তমানে ২.৩ গুণ বেশি। এই সময়ে দেশের গড় তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি, প্রায় ১৬-১৭ ডিগ্রি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের সমুদ্র অঞ্চলে চলমান “মেরিন হিটওয়েভ” – যেখানে সমুদ্রের পৃষ্ঠতল গড়ের চেয়ে ১.৫-২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ – এর প্রভাব এই গ্রীষ্মে দেশের আবহাওয়াকে আরও উষ্ণ করতে পারে। তবে অতিরিক্ত উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বজ্রঝড়ের তীব্রতাও বাড়াতে পারে।
বৃষ্টিপাত ও বাতাসের গতির দিক থেকে গ্রীষ্মকাল গড় পর্যায়ে থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে মেট অফিস। তবে ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে চলমান খরা এবং রিজার্ভারে পানি স্বল্পতার কারণে কিছু এলাকায় পানির ব্যবহার সীমিত করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
মেট অফিসের সাম্প্রতিক ‘স্টেট অব দ্য ইউকে ক্লাইমেট’ রিপোর্টে জানানো হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যুক্তরাজ্যের গ্রীষ্ম এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উষ্ণ, আর্দ্র ও রৌদ্রোজ্জ্বল। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮ ডিগ্রির বেশি “গরম দিন” এবং ৩০ ডিগ্রির বেশি “অতিগরম দিন” এর সংখ্যা ১৯৬১–৯০ এর তুলনায় দ্বিগুণ ও তিনগুণ হয়ে গেছে।
২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়া ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, এমন চরম তাপপ্রবাহের ঘটনা আগামী বছরগুলোতে আরও ঘন ঘন দেখা যেতে পারে।
যদি পূর্বাভাস বাস্তবে রূপ নেয়, তবে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্য আসন্ন গ্রীষ্ম হতে পারে একদিকে উপভোগ্য, আবার অন্যদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের কারণ। সরকার ও সাধারণ মানুষ উভয়কেই প্রস্তুত থাকতে হবে সম্ভাব্য তাপপ্রবাহ, পানির সংকট এবং জলবায়ুজনিত প্রতিক্রিয়াগুলোর মুখোমুখি হওয়ার জন্য।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০২ জুন ২০২৫