9.7 C
London
February 28, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে ইংল্যান্ডের নতুন স্কুল পাঠ্যক্রমে অডিওবুক যুক্ত করার আহ্বান

যুক্তরাজ্যের পাঠ্যসামগ্রীতে অডিওবুক যুক্ত করার দাবি উঠেছে। এক জরিপে দেখা গেছে, আনন্দের জন্য বই পড়ার হার কমছে, তবে ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে অডিও উপভোগ করার প্রবণতা বাড়ছে।

সরকারকে ইংল্যান্ডের নতুন স্কুল পাঠ্যক্রমে অডিওবুক অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা বই পড়ার চেয়ে এখন বেশি অডিওবুক শুনছে।
ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট (এনএলটি)-এর এক জরিপে দেখা গেছে, অডিওবুক ও পডকাস্ট শুনতে শিশুদের আগ্রহ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে এবং ২০২০ সালে প্রথমবার অডিও নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর এবারই প্রথম বই পড়ার চেয়ে অডিও শোনার প্রতি বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যের ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৩৭,০০০ শিশু-কিশোরেরা ৪২.৩% অবসর সময়ে অডিও উপভোগ করেছে। যা ২০২৩ সালে ছিল ৩৯.৪%।
অডিওর জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বই পড়ার প্রবণতা “সংকটপূর্ণ” মাত্রায় পৌঁছেছে বলে জানায় এনএলটি। বর্তমানে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ শিশু (৩৪.৬%) অবসর সময়ে পড়তে ভালোবাসে। বিশেষ করে ছেলেদের বইয়ের প্রতি অনীহা বেশি, যেখানে লিঙ্গভিত্তিক ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ২৮.২% বনাম ৪০.৫%।
তবে, অডিওর ক্ষেত্রে ছেলেদের (৪৩.৪%) তুলনায় মেয়েরা (৪০.৪%) কম আগ্রহী। এনএলটি আশা করছে, অডিওবুক ও পডকাস্ট শিশুদের মধ্যে আনন্দের জন্য পড়ার আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করবে।
সংস্থাটি বলেছে, “আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ার ফরম্যাটের বৈচিত্র্য ও অ্যাক্সেস বাড়ানোর পক্ষে এবং এর মধ্যে অডিও অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।”
এনএলটি-এর প্রধান নির্বাহী জনাথন ডগলাস বলেছেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিশুদের মধ্যে অডিও শোনার প্রতি আগ্রহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটি তাদের পাঠ্যদক্ষতা উন্নত করা, শেখার গভীরতা বৃদ্ধি এবং মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধির মতো নানা উপকারিতা নিয়ে আসে।”
“আমরা যদি একসাথে কাজ করে শিশুদের অডিওর প্রতি আগ্রহকে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমরা নতুন প্রজন্মকে বইপ্রেমী করে গড়ে তুলতে পারব এবং আনন্দের জন্য পড়ার এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।”
তবে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক জন মুলান বলেন, অডিওবুক কখনোই বই পড়ার বিকল্প হতে পারে না। তিনি বলেন, “আমি নিজেও অডিওবুক শুনি এবং আমার সন্তানরাও শোনে, তবে এটি বই পড়ার মতো নয়।”
“অডিওবুক প্রতিক্রিয়াহীন ও স্থির। এতে বই পড়ার মতো পারস্পরিক বিনিময়ের সুযোগ নেই, যদিও তা দারুণভাবে আবৃত্তি করা হয়ে থাকে।”
তিনি আরও বলেন, পড়া হলো সক্রিয় প্রক্রিয়া, যেখানে শ্রবণ কেবলমাত্র গ্রহণমূলক। “অবশ্যই, এটি বইয়ের প্রতি ভালোবাসার প্রবেশদ্বার হতে পারে, তবে এটি বই পড়ার বিকল্প নয়।”
ইংল্যান্ডের শিশু বিষয়ক কমিশনার ও সাবেক প্রধান শিক্ষক র‍্যাচেল ডি সুজা সম্মত হয়ে বলেন, “আমি অডিওবুক শুনতে ভালোবাসি। যদি এটি শিশুদের  সাহিত্যের সংস্পর্শে আনতে পারে, তাহলে আমি অবশ্যই এটি সমর্থন করব।”
অডিওবুকের অবশ্যই একটি জায়গা রয়েছে, তবে এটি বই পড়ার পরিবর্তে আসা উচিত নয়। বই পড়ার অভিজ্ঞতা বিশেষ কিছু।”
সরকার শিগগিরই এর পাঠ্যক্রম ও মূল্যায়ন পর্যালোচনার একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ হেড টিচার্স-এর প্রধান নীতিনির্ধারক সারাহ হানাফিন বলেন, শিশুদের জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় পাঠ্যদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আরও উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
অ্যাসোসিয়েশন অফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ লিডার্স-এর কৌশল ও নীতি পরিচালক জুলি ম্যাককালোক বলেন, “শিক্ষার্থীদের পড়ার প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে অডিও মাধ্যমের ব্যবহার যথেষ্ট সম্ভাবনাময়।”
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক জনাথন বেট বলেন, “লেখিত শব্দের প্রতি মনোযোগ কমার সংকট নিয়ে প্রচুর গবেষণা আছে, তবে তরুণদের মধ্যে অডিওর প্রতি আগ্রহ রয়েছে।”
দীর্ঘ সময়ের পডকাস্টগুলোর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে, শ্রবণের সময় তাদের মনোযোগ থাকে। এটি গল্প বলার মৌলিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন, যেখানে অগ্নিকুণ্ডের পাশে বসে কেউ গল্প শোনায়—সাহিত্যের শুরু সেখান থেকেই।”
একজন শিক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, “আনন্দের জন্য পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিক্ষার্থীদের উন্নতি, মানসিক সুস্থতা এবং বিকাশের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। শিক্ষকদের ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের গল্প, কবিতা, নাটক ও বই পড়াতে, আলোচনা করতে ও শুনতে উৎসাহিত করা হয়, যার মধ্যে অডিওবুকও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

ঋষি সুনাকের ‘শিকড়’ ভারতে, নাকি পাকিস্তানে?

ইংল্যান্ডে চিকিৎসা পেতে দীর্ঘকাল অপেক্ষায় থাকা রোগীর সংখ্যা অর্ধ কোটি ছাড়াল

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সক্রিয় টোরি এমপি