যুক্তরাজ্যে খুব শীঘ্রই ডিজিটাল অ্যাপ এবং ওয়ালেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক হতে যাচ্ছে। মানুষকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ডিজিটাল ভার্সনে ফোনে বহন করার সুযোগ দেবে নতুন এই ব্যবস্থা।
নাগরিকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নথি সংরক্ষণের জন্য একটি নতুন অ্যাপ চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র ব্যবস্থার ভিত্তি হতে পারে বলে গোপনীয়তা রক্ষাকারী সংগঠনগুলোর দাবি করেছে।
গত সপ্তাহে প্রযুক্তি সচিব পিটার কাইল Gov.uk অ্যাপ এবং Gov.uk ওয়ালেটের পরিকল্পনা উন্মোচন করেছেন। এটি লক্ষ লক্ষ মানুষের সময় এবং ঝামেলা বাঁচাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অ্যাপে নথিপত্রের ডিজিটাল সংস্করণ রাখা যাবে, যার মধ্যে থাকবে যুক্তরাজ্যে কাজ করার অধিকার, বেনিফিট অধিকার, প্রাক্তন সেনা সদস্যদের পরিচয়পত্র এবং DBS সার্টিফিকেট। প্রযুক্তিতে বায়োমেট্রিক সুরক্ষা, যেমন মুখের স্ক্যান, ফিঙ্গার রিডার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া এবং আইসল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে এমন ই-গভর্নমেন্ট অ্যাপ ইতোমধ্যেই ব্যবহৃত হচ্ছে বলে তথ্যানুযায়ী জানা যায়।
কাইল জানান, এই প্রযুক্তি ব্যবহার ঐচ্ছিক হবে এবং কাগজের নথি ব্যবহার চালু থাকবে। তবে তিনি অ্যাপটি এতটাই সুবিধাজনক করার চেষ্টা করছেন যাতে মানুষ এটি ব্যবহার “অপরিহার্য” মনে করে।
অ্যাপটিতে অ্যাপল এবং গুগল স্মার্টফোনে থাকা ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো একটি ডিজিটাল ডকুমেন্ট ওয়ালেট থাকবে। কাইল বলেন, “এটি এমন একটি পদ্ধতি হবে যা আপনার কেনাকাটা, ব্যাংকিং এবং ভ্রমণের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং এটি হবে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের উপায়।”
গোপনীয়তা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পেইনাররা নতুন ব্যবস্থার গোপনীয়তার প্রভাব সম্পর্কে স্বচ্ছতা দাবি করছেন।
বিগ ব্রাদার ওয়াচের পরিচালক সিলকি কার্লো বলেন, “কাইল চিরকাল প্রযুক্তি সচিব থাকবেন না। ভবিষ্যতে কোনও সরকার এই স্বেচ্ছামূলক ডিজিটাল ওয়ালেটকে বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। আমাদের মুখের বায়োমেট্রিক ডেটা সংযোজন করে এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”
ওপেন রাইটস গ্রপের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার জেমস বেকার বলেন, “অ্যাপটি কি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে যা সরকারের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করতে হবে? এটি স্বেচ্ছামূলক বলে দাবি করা হলেও এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যেখানে এটি ছাড়া জীবন চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এটি একটি জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাবেসে পরিণত হতে পারে যেখানে প্রতিটি যোগাযোগ নজরদারির আওতায় থাকবে।”
সরকার বলছে, এই অ্যাপ এবং ওয়ালেট অত্যন্ত সুরক্ষিত হবে। এতে আধুনিক স্মার্টফোনে ব্যবহৃত সুরক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যেমন ডিজিটাল ব্যাংক কার্ডের মতো মুখের সনাক্তকরণ। কেন্দ্রীয় ডাটাবেস না থাকায় হ্যাকারদেরকে প্রতিটি ফোনে পৃথকভাবে হ্যাক করতে হবে।
একজন সরকারি মুখপাত্র বলেন, “ডিজিটাল ব্যাংক কার্ড সুরক্ষায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স শারীরিক কপির তুলনায় চুরি করা অনেক কঠিন হবে। আমরা নিশ্চিত করেছি যে ডিজিটাল পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক হবে না।”
ডিজিটাল নথিপত্রের কিছু ব্যবহারিক সুবিধাও রয়েছে। এটি হারানো বা ছিঁড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমাবে এবং নবায়ন প্রক্রিয়া ডিজিটাল হবে। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বাড়াবে। যেমন, বয়স-নিয়ন্ত্রিত পণ্য কেনার সময় নাগরিকদের নাম ও ঠিকানা দেখানোর প্রয়োজন হবে না, শুধু বয়স প্রমাণ করার জন্য স্ক্রিনটি দেখালেই হবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৭ জানুয়ারি ২০২৫