যুক্তরাজ্যে এক আশ্রয়প্রার্থী তার জাতীয়তা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন করার পর আশ্রয় সংক্রান্ত মামলায় আদালতে জয় লাভ করেছেন। ইরান থেকে পালিয়ে আসা দাবি করে প্রথমে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাইলেও পরে তিনি আদালতে বলেন, তিনি আসলে আফগানিস্তানের নাগরিক এবং তালেবানদের ভয়ে দেশ ছেড়েছেন। এই জাতীয়তা পরিবর্তনের মধ্যেই মামলাটি নতুন মোড় নেয়।
২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পর ওই ব্যক্তি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে আশ্রয় আবেদন করেন। শুরুতে তিনি দাবি করেন, তিনি ইরানে সংখ্যালঘু বালোচ জাতিগোষ্ঠীর এবং সুন্নি মুসলিম হওয়ার কারণে নির্যাতনের মুখে পড়তে পারেন, বিশেষ করে কারণ তিনি দেশটি অবৈধভাবে ছেড়ে গেছেন।
২০১৫ সালে তার আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং তার আপিলগুলোও ব্যর্থ হয়। এরপর ২০২১ সালে তিনি ফের জানান, ইরানে ফিরলে তার জীবন হুমকির মুখে পড়বে এবং তার গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা তৈরি করবে।
পরবর্তীতে তিনি নিজের অবস্থান পাল্টে জানান, তিনি আসলে আফগানিস্তানের নাগরিক এবং ১৭ বছর বয়সে দেশ ছেড়ে ইরান, তুরস্ক হয়ে যুক্তরাজ্যে আসেন। তিনি বলেন, তালেবানদের দ্বারা তার পরিবার চাপে ছিল এবং তিনি আশ্রয় পাওয়ার আশায় নিজেকে ইরানির পরিচয় দিয়েছিলেন।
ওই ব্যক্তির বাবা, ভাই এবং বোন এখনো আফগানিস্তানে অবস্থান করছেন। তিনি জানান, তাকে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হলে তালেবানদের হাতে নির্যাতনের শিকার হবেন এবং তার মানসিক অবস্থা আরও অবনতি ঘটবে, যা তার মানবাধিকারের পরিপন্থী।
তবে তার এই নতুন দাবি উপস্থাপন করার জন্য নির্ধারিত ট্রাইব্যুনাল শুনানিতে তিনি এবং তার আইনজীবীরা উপস্থিত হতে পারেননি। তারা জানান, তারা শুনানির কোনো বিজ্ঞপ্তি পাননি। তবে ট্রাইব্যুনাল তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আপিল খারিজ করে।
এরপর ওই ব্যক্তি আপার ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন এবং দাবি করেন, তার অনুপস্থিতিতে শুনানি চালানো আইনগতভাবে ভুল ছিল। আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, তার মৌখিক সাক্ষ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য মামলার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডেপুটি আপার ট্রাইব্যুনাল বিচারক সারা আনজানি বলেন, আবেদনকারীর মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয় এবং উপস্থিতির গুরুত্ব যথাযথভাবে বিবেচনা না করে আগের বিচারক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে মামলাটি প্রথম ধাপের ট্রাইব্যুনালে পুনরায় শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলাটি যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসযোগ্যতা, মানবাধিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে বিচারব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি ও ন্যায়বিচারের প্রতি মনোযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে
২১ জুলাই ২০২৫