যুক্তরাজ্যে ই-স্কুটার ব্যবহারকারীদের জন্য লাইসেন্স প্লেট, ড্রাইভিং টেস্ট ও ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। ই-স্কুটার নিয়ে একের পর এক দুর্ঘটনা এবং অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের ঘটনা বাড়তে থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সরকার নতুন আইন তৈরি করার পরিকল্পনায় রয়েছে, যা প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন ই-স্কুটার নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করবে। এসব স্কুটারের জন্য লাইসেন্স, পরীক্ষা, বয়সসীমা ও ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, সর্বোচ্চ গতি ১২.৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা নির্ধারণের বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।
যদিও পাবলিক রাস্তায় ব্যক্তিগত ই-স্কুটার চালানো নিষিদ্ধ, তারপরও লন্ডনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এগুলোর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পুলিশ জানায়, ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ই-স্কুটার জড়িত অপরাধের সংখ্যা ২০,০০০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও ভয়ঙ্কর গতি বাড়িয়ে অপরাধ সংঘটনের ঘটনা।
সম্প্রতি মার্সিসাইডে এমন একটি ই-স্কুটার ধরা পড়ে যার গতি ছিল ঘণ্টায় ৬২ মাইল – যা আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ধরনের পরিবর্তিত স্কুটার অনেক সময় পথচারীদের ওপর উঠে গিয়ে গুরুতর আহত করছে।
ভেটেরিনারি সার্জন র্যাকেল ডেলগাডো-ক্যালস স্কুটারের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে খুলি ভেঙে ফেলেন। পোর্টসমাউথে এক চালক রেড লাইট অমান্য করে তাকে ধাক্কা দেন।
অন্যদিকে ২০২২ সালে ৭১ বছর বয়সী লিন্ডা ডেভিস ১৪ বছরের এক কিশোর চালকের ধাক্কায় মারা যান।
আইনজীবী নিক ফ্রিম্যান জানান, “বর্তমানে রাস্তায় প্রায় এক মিলিয়ন ব্যক্তিগত ই-স্কুটার চলাচল করছে, কিন্তু এগুলোর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এভাবে চলতে থাকলে এটা গাঁজার ব্যবহারের মতো হয়ে যাবে – যেটা সকলে জানে, কিন্তু চোখ বুজে থাকা হয়।”
তিনি বলেন, “ই-স্কুটারকে যদি আইনের আওতায় আনা যায়, তাহলে এগুলোকে মোটরবাইকের মতো পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এতে চালক, পথচারী এবং অন্যান্য যানবাহনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।”
ফ্রিম্যানের মতে, আইনের প্রথম ধাপে ই-স্কুটারের জন্য নম্বর প্লেট চালু করা দরকার, যাতে চালককে শনাক্ত করা যায় এবং অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
সরকার জানিয়েছে, আগামী বছরের শুরুতেই একটি জনপরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু হবে, যেখানে নিরাপত্তা, অপরাধে ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রিত বাজার গড়ে তোলার বিষয়ে মতামত নেওয়া হবে। যদিও সব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হবে না, তবুও কঠোর নীতিমালা আসছে – তা নিশ্চিত।
ই-স্কুটার বর্তমানে ‘রোড ট্রাফিক অ্যাক্ট ১৯৮৮’-এর আওতায় পড়ে, ফলে যারা নিয়ম ভেঙে চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আগেও ছিল। কিন্তু নতুন আইনের মাধ্যমে ই-স্কুটারকে আরও শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য মেট্রো
এম.কে
২৪ জুলাই ২০২৫