TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে কাউন্সিল ট্যাক্স দ্বিগুণের প্রস্তাবঃ ধনীরা নয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে মধ্যবিত্ত

যুক্তরাজ্যে নতুন বাজেটে ব্যয়বহুল বাড়ির মালিকদের ওপর কর আরোপের পরিকল্পনা নিচ্ছেন চ্যান্সেলর রেচেল রিভস। সরকারের লক্ষ্য প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহ করা। কিন্তু আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে প্রকৃত ধনীদের তুলনায় তুলনামূলক স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ওপরই বেশি চাপ পড়বে।

বর্তমান কাউন্সিল ট্যাক্স কাঠামো ১৯৯১ সালের সম্পত্তিমূল্যের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত। এতে বাড়িগুলোকে A থেকে H পর্যন্ত আটটি ব্যান্ডে ভাগ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ Band H–এ সাধারণত £১.৫ মিলিয়নের বেশি মূল্যের বাড়ি অন্তর্ভুক্ত, আর তার পরের Band G–এ £৭৫০,০০০ থেকে £১.৫ মিলিয়ন মূল্যের বাড়িগুলো পড়ে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার Band G ও Band H–এর কাউন্সিল ট্যাক্স দ্বিগুণ করার কথা বিবেচনা করছে।
তবে পরিসংখ্যান বলছে, এই ট্যাক্স দ্বিগুণ করা হলে মোট রাজস্বের প্রায় ৮০ শতাংশই আসবে Band G–এর বাড়ি থেকে, আর Band H থেকে আসবে মাত্র ২০ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে Band H বাড়ির সংখ্যা খুবই সীমিত—মোট সম্পত্তির মাত্র ০.৬ শতাংশ। অন্যদিকে Band G–এর বাড়ি প্রায় আটগুণ বেশি, যা দেশের প্রায় সর্বত্র বিদ্যমান। অর্থাৎ এই কর বৃদ্ধি ধনীদের নয়, মূলত £৭৫০,০০০ থেকে £১.৫ মিলিয়ন মূল্যের বাড়িতে বসবাসকারী মধ্য–উচ্চ আয়ের পরিবারগুলোকেই বেশি আঘাত করবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, Band G–এর গৃহস্থরা সাধারণত বছরে প্রায় £১,০০,০০০ আয় করেন—কর পরবর্তী আয় দাঁড়ায় প্রায় £৬৭,০০০। তাদের জন্য গড়ে £৪,০০০ ট্যাক্স বৃদ্ধি একটি বড় ধাক্কা। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই বাড়তি করের প্রভাব কেবল গৃহমালিক নয়, ভাড়াটিয়াদের ওপরও পড়বে, কারণ স্বল্পমেয়াদে এই খরচ ভাড়ার মধ্যেই যুক্ত হয়ে যাবে।
বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে অনেক বিশেষজ্ঞ Band H–এর ওপরে আরও নতুন ব্যান্ড যুক্ত করার বা ‘ম্যাশন ট্যাক্স’ আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন—যেখানে সম্পত্তির মূল্যের নির্দিষ্ট শতাংশ কর হিসেবে আরোপ করা হবে। তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতেও উল্লেখযোগ্য রাজস্ব পেতে হলে করহার অস্বাভাবিকভাবে বাড়াতে হবে (৫–১০ গুণ পর্যন্ত), যা অবাস্তব ও রাজনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
এছাড়া সম্পত্তির মূল্যের ওপর শতকরা হারে কর আরোপ করলে উচ্চমূল্যের বাড়ির দাম একবারে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে যেতে পারে। এতে বাজারে স্থবিরতা দেখা দেবে, স্ট্যাম্প ডিউটি (SDLT) রাজস্ব বছরে প্রায় £২ বিলিয়ন পর্যন্ত কমে যেতে পারে। পাশাপাশি এটি বর্তমান মালিকদের জন্য কার্যত এককালীন সম্পত্তি করের মতো অন্যায্য হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের উচিত ট্যাক্সের ভারসাম্য পুনর্বিবেচনা করা। কারণ বিগত দশকে করের সবচেয়ে বেশি বোঝা পড়েছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর, অথচ প্রকৃত সুপার–ধনীদের থেকে তুলনামূলক কম রাজস্ব তোলা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ড্যান নিডল বলেন, “ধনীদের নয়, আরামপ্রিয় মধ্যবিত্তদের ওপরই বারবার করের বোঝা চাপানো হচ্ছে—এটি রাজস্ব সংগ্রহের সহজ পথ, কিন্তু ন্যায্য নয়।”
বিকল্প সমাধান হিসেবে বিশ্লেষকরা প্রস্তাব করছেন—ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স সংস্কার, উত্তরাধিকার করকে আরও কার্যকর করা এবং সর্বোপরি ভূমি কর ব্যবস্থার পূর্ণ সংস্কার। তাদের মতে, এগুলোই প্রকৃত ধনীদের কাছ থেকে ন্যায্য ও টেকসই রাজস্ব সংগ্রহের পথ হতে পারে।
সূত্রঃ ট্যাক্স পলিসি এসোসিয়েট
এম.কে

আরো পড়ুন

ইংলিশ চ্যানেলে আবারো মৃত্যু, বিবাদে ইউকে-ফ্রান্স

ইংল্যান্ডে ফ্রি স্কুল মিলস সম্প্রসারণে বাস্তবে উপকৃত কম শিশুঃ আইএফএস বিশ্লেষণ

ক্রিসমাসের আগে বিধিনিষেধ বাড়বে না: সাজিদ জাভিদ

অনলাইন ডেস্ক