যুক্তরাজ্যে NHS-এর চিকিৎসাকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, অনেক রোগী বর্তমানে চিকিৎসার সময় নিজেদের ভিডিও করে তা টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে আপলোড করছেন। এতে অন্য রোগীর গোপনীয়তা এবং কর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
বিশেষ করে এক্স-রে এবং স্ক্যান নেওয়ার দায়িত্বে থাকা রেডিওগ্রাফাররা বলছেন, কেউ অনুমতি না নিয়েই চুপিচুপি ভিডিও করছেন, যা অনলাইন আলোচনার ঝুঁকি তৈরি করছে।
দক্ষিণ ইংল্যান্ডের এক রেডিওলজি বিভাগে ক্যান্সার রোগীর ক্যানুলা ঢোকানোর সময় তার ১৯ বছর বয়সী মেয়ে ভিডিও করা শুরু করে। সহকারী বলেন, “সে মনে করেছিল, এই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মজার কনটেন্ট হবে। কিন্তু সে অনুমতি নেয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি সারা সপ্তাহান্ত উদ্বিগ্ন ছিলাম, কারণ বুঝতে পারছিলাম না আমার কাজ ঠিকমতো করেছি কি না। ভিডিও তো হয়ে গেছে। ঘুমোতে পারিনি ঠিকমতো।”
আরও উদ্বেগের বিষয় ছিল, ভিডিও করার সময় পাশের বেডে আরেকজন রোগী তার কোলোনোস্কোপি পরীক্ষার সম্মতি দিচ্ছিলেন—এটি ভিডিওতে ধরা পড়তে পারে, যার মধ্যে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম ও জন্মতারিখও থাকতে পারে।
লন্ডনের থেরাপিউটিক রেডিওগ্রাফার অ্যাশলে ডি’আকুইনো জানান, এক রোগীর অনুরোধে তার ছবি তুলতে রাজি হওয়ার পর দেখতে পান, ওই রোগী গোপনে ভিডিও রেকর্ড করছিলেন যা পরবর্তীতে তিনি নিজের ক্যান্সার ব্লগে প্রকাশ করতে চাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, “আমরা NHS স্টাফ হিসেবে নামের ব্যাজ পরি, ভিডিওতে আমাদের নাম দেখা যায়। এতে আমরা অস্বস্তি ও উদ্বেগে থাকি।”
SoR-এর পরিচালক ডিন রজার্স NHS ট্রাস্ট ও বোর্ডগুলোকে আহ্বান জানান, যেন স্পষ্টভাবে জানানো হয়—চিকিৎসাকর্মীদের অনুমতি ছাড়া কোনো ভিডিও করা যাবে না।
তিনি বলেন, “রেকর্ডিংটি কি অন্য রোগীর গোপনীয়তা ভঙ্গ করছে? এটি কি আমাদের চিকিৎসা দিতে বাধা দিচ্ছে? এসব ভাবতে হবে।”
রয়্যাল কলেজ অব রেডিওলজিস্টস-এর প্রেসিডেন্ট ড. ক্যাথারিন হ্যালিডে বলেন, “চিকিৎসার সময় রোগী ও কর্মীরা সবচেয়ে স্পর্শকাতর অবস্থায় থাকেন। সেই পরিবেশে ছবি বা ভিডিও করার আগে অবশ্যই অনুমতি নেওয়া উচিত।”
NHS England-এর সহ-জাতীয় চিকিৎসা পরিচালক অধ্যাপক মেঘনা পন্ডিত বলেন, “রোগীরা যদি তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো অংশ রেকর্ড করতে চান, তবে অবশ্যই তা আগেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসাকর্মীর সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে এবং রেকর্ড শুধু ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্য রোগীর ভিডিও করে ফেলা এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা গোপনীয়তা লঙ্ঘনের গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে। NHS-এর ভেতরে অন্য রোগীর চিকিৎসার তথ্য বা দৃশ্য কোনোভাবেই রেকর্ড করা বা প্রকাশ করা উচিত নয়।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৮ জুন ২০২৫