30.7 C
London
July 1, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা যন্ত্রপাতির ত্রুটিতে মৃত্যুর মিছিল, স্বাস্থ্যসেবার দুরবস্থা চরমে

গত তিন বছরে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস)-তে চিকিৎসা যন্ত্রপাতির ত্রুটির কারণে কমপক্ষে ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং চার হাজারেরও বেশি মানুষ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্রমবর্ধমান ভাঙন ও অকার্যকারিতার ফলে রোগী নিরাপত্তা চরমভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সরকারকে অবিলম্বে পুরাতন ও অচল যন্ত্রপাতি পরিবর্তনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিভিন্ন ঘটনায় দেখা গেছে, জীবন রক্ষাকারী যন্ত্র যেমন হৃদস্পন্দন পুনরুজ্জীবন যন্ত্র ভুল নির্দেশনা দিয়েছে, নবজাতকদের জরুরি সতর্কতা ব্যবস্থায় ব্যর্থতা দেখা গেছে এবং রোগীর শ্বাসনালীতে প্রবেশ করানোর যন্ত্রের ক্যামেরা হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেছে—এসব ঘটনার প্রত্যেকটিই কারও না কারও মৃত্যুর জন্য দায়ী।

প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সাল থেকে শুরু করে ৩,৯১৫টি যন্ত্রপাতি ত্রুটির ঘটনা রেকর্ড হয়েছে, যার মধ্যে ৮৭টি মৃত্যু ঘটিয়েছে। অধিকাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে রোগীরা তেমন বড় ধরনের ক্ষতির শিকার না হলেও, কিছু ঘটনায় রোগীর স্বাভাবিক চলাচলে ছয় মাস পর্যন্ত বিঘ্ন ঘটে এবং স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ৬৮ জন। এছাড়া মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের অনেকেই হারিয়ে ফেলেছেন বেঁচে থাকার শেষ আশাও।

এনএইচএসের দুর্দশার কারণ হিসেবে চিকিৎসা খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ঘাটতি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। স্বাস্থ্যখাতে সেবা প্রদানকারীদের সংগঠন জানিয়েছে, আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে যথাযথ অর্থ বরাদ্দ না থাকায় হাসপাতালগুলোতে বহু পুরোনো যন্ত্র আজও ব্যবহৃত হচ্ছে, যা রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ষিক সভার দলিল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বহু জায়গায় যন্ত্রপাতি ভেঙে পড়েছে অথবা প্রযুক্তিগতভাবে এতটাই পিছিয়ে পড়েছে যে তা ব্যবহার করাই ঝুঁকিপূর্ণ। একাধিক হাসপাতালে মস্তিষ্ক পরীক্ষা যন্ত্র এখনো এক দশক পুরোনো অপারেটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, যা সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। একাধিক নবজাতক ওয়ার্ডে বাতিলযোগ্য শ্বাসযন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে, যা শিশুদের জীবনের জন্য হুমকি।

একটি বৃহৎ সরবরাহকারীর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় ১০,০০০টি যন্ত্র তাদের নির্ধারিত কার্যক্ষম সময় পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ৪,০০০টি যন্ত্র ১০ বছরেরও বেশি পুরোনো। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগেই নির্দেশনা দিয়েছিল, ২০২৪ সালের মধ্যে এক দশকের বেশি পুরোনো সব যন্ত্র অপসারণ করতে হবে।

চিকিৎসা অবকাঠামোর দুরবস্থা এখানেই শেষ নয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, হাসপাতালগুলোর ভবন ও যন্ত্রপাতির মেরামত ব্যয় ২০১২ সালে যেখানে ছিল ৪.৫ বিলিয়ন পাউন্ড, তা ২০২৩ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৮ বিলিয়ন পাউন্ডে। এর মধ্যে অন্তত ২.৭ বিলিয়ন পাউন্ডের কাজ ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত—অর্থাৎ এগুলো রোগীদের জীবনের জন্য সরাসরি হুমকি।

নতুন সরকার এনএইচএসে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ ঘোষণা করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। প্রতিবার বাজেট ঘোষণার সময় শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়; কার্যকর, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধান না এলে স্বাস্থ্যসেবায় মৃত্যু আর বিপর্যয় অব্যাহত থাকবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোগী নিরাপত্তাই তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং ভেঙে পড়া অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য তারা তৎপর। তবে বিশ্লেষকদের মতে, যন্ত্রপাতি বদল, ভবন সংস্কার ও আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্তি ছাড়া বাস্তবে রোগী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

এনএইচএসের সামনে আজ যে সংকট, তা শুধু যন্ত্রের নয়—এটি নীতিনির্ধারণী অবহেলার, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগহীনতার এবং রোগীর জীবনের প্রতি উদাসীনতার ফল। এখনই পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনে এই মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হবে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৯ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটির জেরে হাউজকিপারের পদত্যাগ

ম্যানচেস্টার এক তাঁবুর শহর, অভিযানেও সফল হতে পারল না সিটি কাউন্সিল

যুক্তরাজ্যে পাঁচ বছরে বন্ধ হওয়া বেশির ভাগ ফার্মেসিই দরিদ্র এলাকায়

নিউজ ডেস্ক