যুক্তরাজ্য সরকার ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামের সরাসরি কর্মসূচি ভিত্তিক সংগঠনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর যে আপিল বন্ধের চেষ্টা করেছিল, সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আপিল আদালত শুক্রবার এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানায়, এই নিষেধাজ্ঞার বৈধতা আগামী মাসে হাইকোর্টে বিচারিক পর্যালোচনার মাধ্যমে যাচাই করা হবে।
‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা হুদা আমোরি চলতি বছরের শুরুর দিকে স্বরাষ্ট্রসচিবের নেওয়া নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিচারিক পর্যালোচনার অনুমতি পেয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারের পক্ষে আদালতের বাইরে থেকে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেল। হোম অফিস জানিয়েছে, তারা রায়ের প্রভাব বিবেচনা করছে, তবে সংগঠনটি এখনো একটি নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবেই থাকবে।
৫ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সংগঠনটির সদস্যপদ গ্রহণ বা তাদের প্রকাশ্যে সমর্থন জানানো অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকে ২,১০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ১৭০ জনের বিরুদ্ধে সংগঠনটিকে সমর্থনের অভিযোগে মামলা হয়েছে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড।
সরকার যুক্তি দিয়েছিল যে সংসদ ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর জন্য “ডিপ্রোস্ক্রিপশন” নামে বিকল্প আপিল প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছে, যা হোম অফিসের অভ্যন্তরে সম্পন্ন হয় এবং পরে বিশেষ আদালত Proscribed Organisations Appeal Commission (POAC)-এ যায়। তবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়, যা হুদা আমোরির আইনজীবীরা অযৌক্তিক বলে দাবি করেন।
তারা আদালতে যুক্তি দেন, প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে ঘিরে জনসমর্থন ও বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া অন্যায্য। সংসদ দ্রুত বিচারিক পর্যালোচনার পথ বন্ধ করেনি, তাই হাইকোর্টে সরাসরি নিষেধাজ্ঞার বৈধতা যাচাই হওয়া উচিত।
লেডি চিফ জাস্টিস ব্যারোনেস সু কার রায়ে বলেন, “নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন এবং POAC-এ আপিলের অধিকার মূল সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার বিকল্প নয়। বিচারিক পর্যালোচনা একটি দ্রুত ও কার্যকর পদ্ধতি, যা হাইকোর্টকে নিষেধাজ্ঞার আইনসঙ্গততা নিয়ে কর্তৃত্বপূর্ণ রায় দিতে সক্ষম করবে।” তিনি আরও বলেন, এই রায় ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট অপরাধ মামলাগুলোতেও দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেন, “প্যালেস্টাইন অ্যাকশন একটি ক্রমবর্ধমান অভিযান পরিচালনা করছে, যেখানে ধারাবাহিক ভাঙচুর, জাতীয় নিরাপত্তা অবকাঠামোতে হামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে। সংগঠনটি নিষিদ্ধ অবস্থায়ই থাকবে এবং যারা তাদের সমর্থন করবে তারা আইনের পূর্ণ শক্তির মুখোমুখি হবে।”
অন্যদিকে হুদা আমোরি বলেন, সরকারের বিচারিক পর্যালোচনা এড়ানোর প্রচেষ্টা “বিপরীত ফল দিয়েছে”। তিনি বলেন, “আমরা এখন নভেম্বরের শুনানিতে আগের চেয়ে শক্তিশালী আইনি ভিত্তি নিয়ে যাচ্ছি। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী ও অস্ত্র বাণিজ্য ব্যাহতকারীদের গ্রেপ্তার করা সন্ত্রাসবিরোধী সম্পদের ভয়াবহ অপব্যবহার।”
নভেম্বর মাসে হুদা আমোরির মামলার শুনানিতে তিনি নিষেধাজ্ঞার বৈধতা নিয়ে আরও বিস্তৃত আইনি যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবেন। আদালতের এই রায় শুধু প্যালেস্টাইন অ্যাকশন নয়, ভবিষ্যতে যেকোনো বিতর্কিত নিষিদ্ধ সংগঠনের ক্ষেত্রেও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১৭ অক্টোবর ২০২৫