20.1 C
London
July 23, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে ফিশ অ্যান্ড চিপসে হানা, ভুয়া পরিচয়ে কর্মী নিয়োগে হোম অফিসের কঠোর শাস্তি

যুক্তরাজ্যের সারে’র এগহ্যামে অবস্থিত ‘বিগ ফ্রাই ফিশ অ্যান্ড চিপস’-এ ভুয়া পরিচয়ে একজন কর্মী নিয়োগের ঘটনায় হোম অফিস ৪০ হাজার পাউন্ডের জরিমানা আরোপ করেছে, যা দোকানের মালিক মার্ক সুলিভানের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘বিধ্বংসী এক অভিজ্ঞতা’। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যের ছোট ব্যবসাগুলোর ওপর হোম অফিসের কড়া নীতির কঠোর সমালোচনা উঠেছে।

 

জানা যায়, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে একজন ব্যক্তি মার্ক সুলিভানের দোকানে কাজ শুরু করেন, তিনি ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স নম্বর, স্টুডেন্ট ফাইন্যান্স ঋণ পরিশোধের তথ্য, হাউজিং বেনিফিটের রশিদ এবং একটি ব্রিটিশ পাসপোর্টের ফটোকপি দেন। PAYE পদ্ধতিতে তাকে নিয়মিত বেতন দেওয়া হতো। কিন্তু হোম অফিস দাবি করে, এসব নথি দিয়ে কাজের বৈধতা নিশ্চিত করা যায় না এবং ওই ব্যক্তি প্রকৃত পরিচয় গোপন করে অন্য কারও পরিচয়ে কাজ করছিলেন।

মালিক সুলিভান বলেন, “আমরা পাসপোর্টের মূল কপি দেখিনি—এটা আমাদের একটি প্রশাসনিক ভুল। তবে আমরা বিষয়টি জানার পরই হোম অফিসকে সব জানিয়েছি। কোনো রকম ইচ্ছাকৃত কিছু ছিল না। এরপরও আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।”

জরিমানার চিঠিতে তাকে জানানো হয়, ২১ দিনের মধ্যে পুরো অর্থ পরিশোধ করলে ৩০ শতাংশ ছাড় পাবেন—অর্থাৎ £২৮,০০০ দিতে হবে। বিকল্প হিসেবে আপত্তি জানালে তা £৮০,০০০ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, যা ব্যবসার জন্য ধ্বংসাত্মক হতো। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই ছাড়সহ জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন তিনি।

হোম অফিস সহযোগিতার জন্য £৫,০০০ ছাড় দিলেও আরও £৫,০০০ ছাড় পাওয়া যেত যদি সুলিভান ওই কর্মীর পরিচয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আগে হটলাইনে রিপোর্ট করতেন। কিন্তু তিনি বলেন, “ব্যক্তিটি শিক্ষিত, ভদ্র এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল—আমাদের জন্য কোনো সন্দেহ করার উপায় ছিল না।”

২০২৩ সালের শেষদিক থেকে হোম অফিস একক কর্মীর জন্য জরিমানার পরিমাণ £১৫,০০০ থেকে বাড়িয়ে £৪৫,০০০ করে এবং মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত ১,৫০০-র বেশি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। এই জরিমানা কোম্পানির আকার বিবেচনা না করেই সমানভাবে আরোপ করা হচ্ছে, যা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

ফেডারেশন অব স্মল বিজনেসেস (FSB) বলছে, ছোট ব্যবসায়ীরা যথাসাধ্য সতর্কতা অবলম্বন করে থাকলেও ইমিগ্রেশন আইন অনুসরণে কিছু ভুল হলে তাদের ওপর এত বড় আর্থিক চাপ দেওয়া অনুচিত। সংস্থাটির পরিচালক ক্রেইগ বোমন্ট বলেন, “ হোম অফিস কোনো ব্যাখ্যা শোনার সুযোগ না দিয়ে বিশাল জরিমানা চাপিয়ে দিচ্ছে, যা একটি ব্যবসাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।”

এদিকে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান চলছে “অভূতপূর্ব মাত্রায়”। তবে মানবাধিকার সংস্থা ও ছোট ব্যবসা মালিকদের মতে, এমন একমুখী শাস্তিমূলক নীতিতে যারা সততা ও ভুলের পার্থক্য বোঝাতে চায়, তাদের গলা রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “কোনো কর্মীকে নিয়োগের আগে মালিকদের অবশ্যই রাইট টু ওয়ার্ক চেক সম্পন্ন করতে হবে। এই প্রক্রিয়া সহজ, দ্রুত ও ডিজিটালি করা যায়।” কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, অনেকেই এই প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্ত হচ্ছে, এবং শেষ পর্যন্ত তারা পড়ছেন ভয়াবহ আর্থিক বিপদের মুখে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
২৩ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে ১৩ বছর আগের মামলার জন্য ৩৫ হাজার পাউন্ড দাবি, আদালতের দ্বারস্থ আইনি সংস্থা

‘দুই বছর পর পর ফিফা বিশ্বকাপ হতে পারে সমুদ্রে মৃত্যুর সমাধান’

অনলাইন ডেস্ক

ব্রিটিশদের ১০ দিন কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করল ভারত

অনলাইন ডেস্ক