ইংল্যান্ডের কেন্ট পুলিশের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে এক নারীকে হুমকি ও আটক করার অভিযোগে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ৪৩ বছর বয়সী লরা মার্টন গত ১৪ জুলাই ক্যান্টারবারিতে প্যালেস্টাইন পতাকা ও ‘ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদে অংশ নিলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় তাঁকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেয় সশস্ত্র পুলিশ।
পুলিশের দাবি ছিল, তার বার্তাগুলো নিষিদ্ধ সংগঠন “প্যালেস্টাইন অ্যাকশন”-এর সমর্থন হিসেবে গণ্য হতে পারে। উল্লেখ্য, সংগঠনটি গত জুলাইয়ের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ঘটনাটি ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশের পর বিষয়টি সংসদে, আদালতে এবং সমতারক্ষী কমিশনে তোলেন সংশ্লিষ্টরা। তারা এটিকে গাজা সংহতি আন্দোলনের ওপর পুলিশের “অতিরিক্ত কঠোরতা” হিসেবে বর্ণনা করেন।
কেন্ট পুলিশের প্রধান কনস্টেবল টিম স্মিথের পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে স্বীকার করা হয়েছে, লরা মার্টনের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হয়েছে এবং পুলিশ জাতীয় সন্ত্রাসবিরোধী নীতিমালা ভঙ্গ করেছে। চিঠিতে বলা হয়, তার ব্যক্তিগত তথ্য অবৈধভাবে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছিল এবং তা মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে একই ধরনের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে আর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় গণ্য করা হবে না বলে জানানো হয়েছে।
ঘটনার ভিডিও লরা নিজেই ধারণ করেন, যেখানে এক কর্মকর্তা তাকে বলেন—“ফ্রি গাজা, ইসরায়েল, গণহত্যা—এই শব্দগুলো নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থন হিসেবে ধরা হয় এবং এটা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় অপরাধ।” ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, তিনি “প্যালেস্টাইন অ্যাকশন” সমর্থন করেছেন, যা আইনের ১২(১এ) ধারায় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
পরবর্তীতে কেন্ট পুলিশ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। ক্ষমা প্রার্থনা চিঠিতে লেখা হয়, “চিফ কনস্টেবল আপনার প্রতি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং নিশ্চিত করছেন যে, ১৪ জুলাইয়ের মতো কোনো প্রতিবাদ আবার হলে তা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অপরাধ বলে ধরা হবে না।”
লরা মার্টন জানান, তিনি ক্ষতিপূরণের সব অর্থ প্যালেস্টাইনের মানবিক সহায়তায় দান করবেন। তার ভাষায়, “মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদের অধিকার থেকে বিরত করা যাবে না। এই মামলাটি দেশের সব পুলিশ প্রধানের জন্য একটি সতর্কবার্তা হওয়া উচিত।”
মার্টনের আইনজীবী ভাট মারফি সলিসিটরসের শামিক দত্ত বলেন, “এটি প্রথমবার, যখন কোনো পুলিশ প্রধান অবৈধ আটক ও নিষিদ্ধ সংগঠন প্রসঙ্গে ভুল প্রয়োগের কারণে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন এবং ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হলেন। তবে দুঃখজনকভাবে, এ ধরনের ঘটনা একক নয়—দেশব্যাপী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের নজির বাড়ছে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৪ অক্টোবর ২০২৫