যুক্তরাজ্য স্বাস্থ্যসেবা খাত নিয়ে চরম খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। জিপিরা বলেছেন, ইংল্যান্ডের বঞ্চিত এলাকায় প্রশিক্ষণরত ডাক্তারদের আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত এলাকায় প্রশিক্ষণরত ডাক্তারদের আকৃষ্ট করার জন্য গৃহীত একটি কর্মসূচি বাতিলের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে এনএইচএস ইংল্যান্ডের বৃহত্তম পারিবারিক ডাক্তারদের সংগঠন।
রয়্যাল কলেজ অব জিপি বলছে, টিইআরএস কর্মসূচি বাতিলের হুমকি ‘উদ্বেগজনক’ এবং এটি স্বাস্থ্য বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলবে।
তথ্যমতে জানা যায়, ২০১৬ সালে চালু হওয়া টার্গেটেড এনহান্সড রিক্রুটমেন্ট স্কিম (TERS) ইংল্যান্ডের বঞ্চিত এলাকায় প্রশিক্ষণরত সাধারণ চিকিৎসকদের (GPs) বিশেষ সুবিধা প্রদান করতো।প্রশিক্ষণরত সাধারণ চিকিৎসকদের আকৃষ্ট করতে ২০,০০০ পাউন্ড এককালীন অর্থপ্রদান সুবিধা দিত সরকার।
গত বছর, এই কর্মসূচির অধীনে ২,০০০-এর বেশি জিপিকে কম স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া সম্প্রদায়ের জন্য চিকিৎসা নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করেছে।
রয়্যাল কলেজ অব জিপি (RCGP) জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ সালের জন্য এই কর্মসূচি বাতিলের সম্ভাবনা ‘উদ্বেগজনক’, যা এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে পারে। এনএইচএস ইংল্যান্ড বর্তমানে ব্যয় হ্রাসের পদক্ষেপ হিসেবে এই কর্মসূচি বাতিলের কথা বিবেচনা করছে।
সংগঠনটি বলছে, এটি বঞ্চিত এলাকায় জিপি নিয়োগ আরও কঠিন করে তুলবে। যেখানে রোগীরা ইতিমধ্যেই তুলনামূলকভাবে ধনী এলাকার চেয়ে বেশি অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
যদিও ইংল্যান্ডের প্রায় সব এলাকায় চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে এবং যুক্তরাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্যকর্মী সংকট চলছে, তবে বঞ্চিত এলাকায় পরিস্থিতি আরও গুরুতর।
উদাহরণস্বরূপ, ইংল্যান্ডের অন্যতম বঞ্চিত এলাকা কিংস্টন আপন হল-এর একজন জিপিকে প্রায় দ্বিগুণ রোগীর দায়িত্ব নিতে হয়।
বঞ্চিত এলাকায় জিপি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিটি চিকিৎসকের গড়ে ৩০০ জনের বেশি রোগীকে সেবা প্রদান করতে হয়।
রয়্যাল কলেজ অব জিপি আশঙ্কা করছে, সরকার জিপিদের ধরে রাখার দুটি কর্মসূচি—জেনারেল প্র্যাকটিস ফেলোশিপ প্রোগ্রাম ও সাপোর্টিং মেন্টরস স্কিম—গত আর্থিক বছরে বাতিল করার পর, এবার টিইআরএসের তহবিলও কেটে দিতে পারে।
প্রফেসর কামিলা হথর্ন, রয়্যাল কলেজ অব জিপির চেয়ারপার্সন, বলেছেন, “ এই কর্মসূচির বাতিল হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে সেইসব এলাকায়, যেগুলো ইতিমধ্যেই সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত। এইসব এলাকার রোগীদের স্বাস্থ্য সমস্যা অনেক বেশি। কিন্তু যদি অভিজ্ঞ ও নিরবিচ্ছিন্ন জিপি টিম থাকে, যারা রোগীদের দীর্ঘমেয়াদে চেনে ও বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তোলে, তাহলে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “ সরকার বলছে যে তারা স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য কমাতে চায়, বাড়াতে চায় না। কিন্তু যদি এই ধরনের কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে জন্মস্থান ও বসবাসের কারণে রোগীদের মধ্যে স্বাস্থ্য বৈষম্য আরও বেড়ে যাবে।”
“টিইআরএস প্রকল্প নতুন চিকিৎসকদেরও উৎসাহিত করে যাতে তারা রোগীদের সেবা করা থেকে দূরে চলে না যায়।”
টিইআরএস প্রকল্প বন্ধ হওয়া নিয়ে এনএইচএস ইংল্যান্ডের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
৩১ জানুয়ারি ২০২৫