13.2 C
London
May 8, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)শীর্ষ খবর

যুক্তরাজ্যে বাড়ি ও ভাড়ার বৃদ্ধি: তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন হুমকির মুখে

মোস্তাফিজুর রহমান

বিলেতে মানুষের মৌলিক পাঁচটি অধিকারের মধ্যে একমাত্র বাসস্থানই সবচেয়ে ব্যয়বহুল চাহিদা। ইনফ্লেশনের কারণে বিলেতে প্রপার্টি রেন্ট এবং প্রপার্টির মূল্য উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী ভাড়াটেরা, ক্রমবর্ধমান ভাড়া ও বাড়ির দামের কারণে স্বপ্নের বাড়ি কেনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। 

Barclays ব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, “রেন্টফ্লেশন” (ভাড়ার মুদ্রাস্ফীতি) এর কারণে ৫৮% ট্যানেণ্টদের গত এক বছরে বাসস্থান খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে জেনারেশন জেড (Gen Z) ভাড়াটেদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ—৩৬% তরুণ ট্যানেণ্ট গত ছয় মাসে ভাড়া বৃদ্ধির শিকার হয়েছে।

ভাড়া বৃদ্ধির চাপ  এবং প্রপার্টি ক্রয় এর জন্য সঞ্চয় 

    • রেন্টাল খাতে বর্তমানে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে। যুক্তরাজ্যে গড়ে প্রতি একটি ভাড়ার বাড়ির জন্য ১০ জন ভাড়াটে আগ্রহী।
    • গত এক বছরে ভাড়া বেড়েছে ৭.৭%, গড় মাসিক ভাড়া এখন £১,৩৩২।
    • বিলেতে গড়ে ট্যানেণ্টরা মাসে £১০৫.৯০ বেশি খরচ করছেন, কিন্তু Gen Z-দের ক্ষেত্রে এই রেন্টের পরিমাণ £১৩৪.৭০ (£১,৬১৬ বার্ষিক)। 
  • প্রতি ৫ জনে ১ জন ট্যানেণ্ট  মনে করেন, রেন্ট বৃদ্ধিই তাদের বাড়ি কেনার পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
    • বাড়ির দাম বেড়েছে ৫.৪%, গড় মূল্য £২৬৮,০০০। 
  • ৬৪% তরুণ স্বীকার করেছে যে পরিবারের আর্থিক সাহায্য বা উত্তরাধিকার সম্পত্তি ছাড়া বাড়ি কেনা তাদের পক্ষে অসম্ভব।

 

স্বপ্নের প্রপার্টি কতটা দূরে

  • বিলেতে প্রথমবারের মতো বাড়ি কেনার গড় বয়স এখন ৩৪ বছর, যা দুই বছর আগে ছিল ৩২ বছর।
  • যদিও ৫৭% তরুণ বাড়ির ডাউন পেমেন্টের জন্য সঞ্চয় করছে, এবং ৪০% মনে করে আগামী ৫ বছরে বাড়ি কেনা সম্ভব।
  • Barclays ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী সার্বিকভাবে মাত্র ২৩% মানুষ বাড়ি কেনাকে বাস্তবসম্মত লক্ষ্য হিসেবে দেখেন।
  • তবুও আশঙ্কা রয়ে গেছে, ৮৮% ভোক্তা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে চিন্তিত এবং ৬৪% ইন্টারেস্ট রেট নিয়ে চিন্তিত, যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ স্তর। 

 

ইংল্যান্ডে ভাড়া: কতদিন কাজ করে শোধ করতে হয়?

অ্যাডাম স্মিথ ইন্সটিটিউটের (ASI) গবেষণা অনুসারে, ইংলিশ ট্যানেণ্টরা তাদের ল্য্যান্ডলর্ডদের রেন্ট দেওয়ার জন্য বছরে ১২৫ দিনের সমপরিমাণ কাজ করতে হয়। অর্থাৎ, বছরের ৬ মে পর্যন্ত তাদের আয় শুধু রেন্টই চলে যায়! লন্ডনের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ—সেখানে ২৭ মে পর্যন্ত কাজ করতে হয় শুধু রেন্ট দিতে।

এই গণনাটি করের আগে অর্জিত আয়ের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। এটি গণনা করার জন্য, অ্যাডাম স্মিথ ইন্সটিটিউট Private Rented Sector পরিবারগুলি তাদের ল্য্যান্ডলর্ডদের যে রেন্ট দেয় তার অনুপাতকে বছরের দিনগুলিতে রূপান্তর করেছে। 

ব্রিটেনে প্রপার্টি রেন্ট এবং প্রপার্টি ক্রয় করার সময় যে সব বিষয় এর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে:

  • বিলেতে প্রপার্টি ক্রয় করা অনেক সহজ। যদি সেভিং কিছু থাকে আর ব্যাংকের লোণ পরিশোধ করার মতো সামর্থ্য থাকে তাহলে খুব সহজেই ব্যাংক থেকে লোণ নিয়ে প্রপার্টি ক্রয় করা যায়। প্রপার্টি কেনার জন্য ব্যাংক থেকে লোণ নেওয়াকে বলা হয় মর্গেজ।
  • প্রপার্টি রেন্ট এর মাধ্যমে সাধ্য অনুযায়ী এবং পছন্দমত জায়গায় বসবাস করা যায়। অন্য দিকে প্রপার্টি ক্রয় করা হল একটি লং টার্ম কমিটমেন্ট এবং এক ধরণের ইনভেস্টমেন্ট।
  • প্রতি বছর প্রপার্টি রেন্ট বৃদ্ধি হতে পারে। অন্যদিকে মর্গেজ নিয়ে প্রপার্টি কিনলে ২ বছর বা ৫ বছর মেয়াদী একটি ফিক্সড মাসিক মর্গেজ পেমেন্ট করা লাগে।
  • মর্গেজ নিয়ে প্রপার্টি ক্রয় করার সময় প্রপার্টি মূল্যের নুন্যতম ৫% থেকে ১০% ডিপোজিট হিসেবে দিতে হবে। প্রপার্টি রেন্ট করার সময় একটি রিফান্ডেবল সিকিউরিটি এ্যামান্ট দেয়া লাগে।
  • কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন অথবা অন্য কোন কারণে শর্ট নোটিশে রেন্টাল প্রপার্টি পরিবর্তন করা যায়।
  • প্রপার্টি রেন্ট একজন ল্যান্ডলর্ডকে দেয়া লাগে। মর্গেজ নিয়ে প্রপার্টি কিনলে একটি নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রতি মাসে একটি নিদিষ্ট এ্যামান্ট মাসিক মর্গেজ পেমেন্ট হিসেবে মর্গেজ ল্যান্ডরকে দেয়া লাগে এবং নিদিষ্ট সময় শেষে প্রপার্টির পূর্ণ মালিকানা পাওয়া যায়।
  • প্রপার্টি ক্রয় করা হল এক ধরণের ইনভেস্টমেন্ট। প্রপার্টি ক্রয় করার পরে ভবিষ্যতে প্রপার্টির মূল্য বৃদ্ধি পেলে। প্রপার্টি রি-মর্গেজ করে, রি-মর্গেজ এর টাকা ডিপোজিট হিসেবে ব্যবহার করে আরেকটি প্রপার্টি ক্রয় করা যাবে।
  • প্রপার্টি ক্রয় করলে বাধ্যতামূলকভাবে বিল্ডিং ইনস্যুরেন্স করা লাগে। অন্যদিকে প্রপার্টি রেন্ট নিলে টেন্যান্ট তার কনটেন্ট এর সিকিউরিটি এর জন্য ঐচ্ছিকভাবে কনটেন্ট ইনস্যুরেন্স করতে পারেন

 

যুক্তরাজ্যের তরুণরা বাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখলেও অর্থনৈতিক চাপ তাদের লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। সরকারি নীতি ও বাজারের অবস্থার পরিবর্তন না হলে এই সংকট আরও গভীর হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাড়া নিয়ন্ত্রণ বা কঠোর নীতি নয়, বরং পরিকল্পনা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। সময় এসেছে সাশ্রয়ী মূল্যের বাসস্থানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার।

প্রপার্টি মার্কেট এবং প্রপার্টি মর্গেজ সম্পর্কে আপনাদের কোন মতামত বা জিজ্ঞাসা থাকলে নিন্মের ই-মেইল অথবা টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। 

Email: info@benecofinance.co.uk

Tel: 02080502478

আরো পড়ুন

ধর্ষণ বিষয়ে তামাশা, বর্ণবাদসহ বহু নোংরামির দায়ে জর্জরিত স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড

যুক্তরাজ্যের অভিবাসী আইন নিয়ে জাতিসংঘের উষ্মা প্রকাশ

বাংলাদেশের পাশে থাকবে জাপান: জাপানি রাষ্ট্রদূত