যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে আবারও দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস)-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মে মাস পর্যন্ত তিন মাসে দেশটির সরকারিভাবে নির্ধারিত বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৭ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২১ সালের জুনের পর সর্বোচ্চ।
একই সময়ে গড় মজুরি বৃদ্ধির হার ৫.৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুযায়ী বেকারত্ব ৪.৬ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও তা অতিক্রম করেছে। প্রাইভেট সেক্টরে মে মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৭ শতাংশ, যেখানে এপ্রিল পর্যন্ত ছিল ৪.৩ শতাংশ।
ওএনএস-এর অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান পরিচালক লিজ ম্যাকিউন বলেছেন, “শ্রমবাজার দুর্বল হয়ে পড়ছে,” যা সুদের হার কমানোর আগে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ৩.৬ শতাংশে পৌঁছালেও দেশের অর্থনীতি মে মাসে ০.১ শতাংশ ও এপ্রিল মাসে ০.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। এই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী ৭ আগস্ট ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের নীতিনির্ধারকরা সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
আইসিএইডব্লিউ (ICAEW)-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ সুরেন থিরু (Suren Thiru) বলেন, “চাকুরির বাজারে ধাক্কা লেগেছে। ব্যবসার ব্যয় বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা চাকুরি হারানোর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এই পরিসংখ্যান আগস্টে সুদের হার কমানোর পথ তৈরি করে দিচ্ছে।”
এই পরিস্থিতি চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসের জন্যও চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আগামী বাজেটে কর বাড়ানোর চিন্তায় থাকলেও দুর্বল অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান সংকট তার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা তৈরি করতে পারে।
চাকুরির খালি পদের সংখ্যা জুন মাসে কমে দাঁড়িয়েছে ৭,২৭,০০০-এ, যা টানা ৩৬ মাস ধরে হ্রাস পাচ্ছে।
ফেডারেশন অফ স্মল বিজনেসেস-এর পলিসি চেয়ার টিনা ম্যাকেনজি অভিযোগ করেছেন, “রিভসের কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত, ২৮টি নতুন শ্রম আইন এবং পেনশন খরচ বাড়ানোর উদ্যোগ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।”
হসপিটালিটি ইউকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরের বাজেটের পর থেকে হোটেল, বার ও রেস্টুরেন্ট খাতে প্রায় ৮৪,০০০ চাকরি হারিয়েছে। সংগঠনের চেয়ার কেট নিকোলস বলেন, “গত বছরের বাজেটের সিদ্ধান্ত সরাসরি হসপিটালিটি খাতকে আঘাত করেছে।”
চাকুরি ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী অ্যালিসন ম্যাকগোভার্ন জানান, বাস্তব মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানুষকে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, টিকবক্স সংস্কৃতি দূর করে কার্যকর কর্মসংস্থান সহায়তা চালু করা জরুরি।
শ্যাডো ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশনস সেক্রেটারি হেলেন হোয়াটলি এই তথ্যকে “ভয়াবহ অর্থনৈতিক বাস্তবতার ধারাবাহিকতা” বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “প্রতিটি চাকুরি হারানো মানে একেকটি পরিবারের জন্য বড় ধাক্কা।”
ক্যাপিটাল ইকোনমিকস এর প্রধান অর্থনীতিবিদ পল ডেলস বলেন, ব্যবসাগুলো উচ্চ বীমা খরচ ও ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে এবং কর্মী ছাঁটাই করছে, যা ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতিকে কমিয়ে আনতে পারে।
রেক্রুটমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট কনফেডারেশন ও কেপিএমজি (KPMG)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাসে চাকুরির সন্ধানকারীর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়েছে, যা ২০২০ সালের নভেম্বরে দ্বিতীয় কোভিড লকডাউনের পর সর্বোচ্চ।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৭ জুলাই ২০২৫