যুক্তরাজ্যের প্রতিবন্ধী নারী জোডি হোয়াইটিং আত্মহত্যা করেন তার জীবনধারণে সহায়ক ভাতা ভুলভাবে বন্ধ করে দেওয়ার কারণে। মৃত্যুর আগে তিনি রেখে যান একাধিক চিরকুট, যেখানে লিখেছিলেন, “বিল দিতে পারছি না, খাবার নেই, ঋণে জর্জরিত।”
ঘটনাটি ঘটে ২০১৭ সালে। দীর্ঘ আট বছর আইনি লড়াইয়ের পর দ্বিতীয়বারের মতো তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে তার মা জয় ডোভ স্পষ্টভাবে বলেন, “আমি নিশ্চিত—এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কর্মসংস্থান ও পেনশন অধিদপ্তর।”
তদন্ত পরিচালনাকারী বিচারক ক্লেয়ার বেইলি জানান, হোয়াইটিং আত্মহত্যা করেছিলেন এবং তা ঘটেছিল তার মানসিক অবস্থার অবনতি ও ভাতা বন্ধের কারণে সৃষ্ট হতাশার প্রেক্ষাপটে।
জোডি হোয়াইটিং ছিলেন ৪২ বছর বয়সী, নয় সন্তানের জননী এবং গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার কারণে চলাফেরা করতে অক্ষম ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যথায় ভুগছিলেন এবং তার মানসিক অবস্থাও ছিল সংকটাপন্ন।
তদন্তে জানা যায়, হোয়াইটিং একটি স্বাস্থ্যপরীক্ষায় উপস্থিত হতে পারেননি, কারণ সেই সময় তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। এরপরেই তার জীবনধারণ ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে বন্ধ হয়ে যায় আবাসন ও অন্যান্য সহায়তাও।
তার মা জানান, ভাতা বন্ধের খবর শুনে হোয়াইটিং চরম হতাশায় ভেঙে পড়েন, কাঁদছিলেন এবং বারবার বলছিলেন—“সব শেষ, আর কিছু পাওয়ার আশা নেই।”
হোয়াইটিংয়ের মৃত্যুর পর প্রথম তদন্ত মাত্র ৩৭ মিনিটে শেষ হয়, যেখানে কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের ভূমিকাই আলোচনায় আসেনি। এরপর মা জয় ডোভ উচ্চ আদালত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিতে।
নতুন তদন্তে উঠে আসে হোয়াইটিংয়ের রেখে যাওয়া চিরকুটগুলোর হৃদয়বিদারক বক্তব্য। একটিতে লেখা: “আমার খাবার নেই, বিল দিতে পারছি না।” আরেকটিতে লেখা: “আর সহ্য করতে পারছি না।” একটি চিরকুট শেষ হয়েছিল মাত্র তিনটি শব্দে: “ঋণ, ঋণ, ঋণ।”
একটি স্বাধীন পর্যালোচনা প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়, তার ভাতা বন্ধ করা উচিত হয়নি এবং সিদ্ধান্তে একাধিক ভুল ছিল।
কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে হেলগা সুইডেনব্যাংক বলেন, দপ্তরের উচিত ছিল হোয়াইটিংয়ের স্বাস্থ্যগত সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা। তিনি স্বীকার করেন, দপ্তরের অনেক কর্মকর্তা তখন মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম ছিলেন না। এখন কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং আরও পরিবর্তন প্রক্রিয়াধীন।
বিচারক বলেন, তিনি দুঃখিত যে হোয়াইটিংয়ের পরিবারকে এত দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তিনি জয় ডোভের ধৈর্য ও সাহসিকতাকে শ্রদ্ধা জানান।
তবে বিচারক মনে করেন, দপ্তরে পরিবর্তন এসেছে এবং সে কারণে তিনি আর কোনও অতিরিক্ত সুপারিশ করেননি।
জোডি হোয়াইটিংয়ের মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি—যেখানে সবচেয়ে দুর্বল নাগরিকও নিরাপদ নয় একটি ভুল সিদ্ধান্তের বিপরীতে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৩ জুন ২০২৫