TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে বোরকা নিষিদ্ধের আহ্বান রবার্ট জেনরিকের, কনজারভেটিভ দলে নতুন বিতর্ক

কনজারভেটিভ দলের শ্যাডো জাস্টিস সেক্রেটারি রবার্ট জেনরিক যুক্তরাজ্যে বোরকা নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। টক রেডিওর তার নিজস্ব অনুষ্ঠান ‘রিং রব’-এ তিনি বলেন, “আমি সম্ভবত বোরকা নিষিদ্ধ করতাম। এই দেশে কিছু মৌলিক মূল্যবোধ আছে, এবং আমাদের তা রক্ষা করতে হবে।”

জেনরিকের এই মন্তব্য আসে এমন সময়ে, যখন ইউরোপের একাধিক দেশ ইতোমধ্যেই মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করেছে। ফ্রান্সে ২০১০ সালে জনসমক্ষে বোরকা ও নিকাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়, পরে বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডও একই পথে হাঁটে। জেনরিক বলেন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সম্প্রতি বোরকা ও নিকাব নিষিদ্ধের প্রস্তাব দিয়েছেন, এবং “ব্রিটেনেরও উচিত নিজেদের মৌলিক মূল্যবোধ রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া।”

তবে জেনরিকের বক্তব্য দলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে। কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনক এর আগে বলেছেন, বোরকা নিষিদ্ধ করলেই সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতার সমস্যা সমাধান হবে না। তিনি মনে করেন, অফিস বা কর্মস্থলে নিয়োগকর্তারা চাইলে পোশাকবিধি নির্ধারণ করতে পারেন, কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে আইন করে নিষিদ্ধ করা ‘অপ্রয়োজনীয় এবং বিপরীত ফলাফল বয়ে আনতে পারে।’

লেবার এমপি স্যাম রাশওয়ার্থ জেনরিকের মন্তব্যকে ‘অ-ব্রিটিশ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এটি আমাদের জাতীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী।” টোরি চেয়ারম্যান কেভিন হোলিনরেক জানান, এটি এখনো দলের আনুষ্ঠানিক নীতি নয়, যদিও তিনি ব্যক্তিগতভাবে জেনরিকের মতের প্রতি সহানুভূতিশীল।

এর আগেও ইসলামবিরোধী মন্তব্যের কারণে জেনরিক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। গত বছরের কনজারভেটিভ নেতৃত্ব প্রতিযোগিতায় তিনি বলেছিলেন, যারা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করেন তাদের গ্রেফতার করা উচিত— যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। তখন তাকে ‘টেক্সটবুক ইসলামোফোবিয়া’র উদাহরণ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।

জুন মাসে দ্য টেলিগ্রাফ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কেমি বাডেনক বলেন, তিনি মুখ ঢাকা অবস্থায় কাউকে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেন না। তার ভাষায়, “যদি কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে চান, তাকে মুখ দেখাতে হবে— সেটা বোরকা হোক বা বালাক্লাভা।” তবে তিনি আবারও বলেন, ফ্রান্সে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তাদের সামাজিক সংহতির সমস্যা এখনো গভীর, তাই “বোরকা নিষিদ্ধ করা আসল সমাধান নয়।”

রিফর্ম ইউকের এক সংসদ সদস্য সারা পচিন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে বোরকা নিষিদ্ধের আহ্বান জানালে সংসদে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং এমপিরা ‘লজ্জা’ বলে চিৎকার করেন। রিফর্ম দলের কর্মকর্তারা পরে জানায়, বোরকা নিষিদ্ধ করা দলের আনুষ্ঠানিক নীতি নয়।

জেনরিকের মন্তব্য আবারও জাতীয় রাজনীতিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ব্রিটিশ মূল্যবোধ নিয়ে নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিবাসন ও সংস্কৃতি নিয়ে চলমান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে এই ইস্যু কনজারভেটিভ দলকে আরও বিভক্ত করতে পারে।

সূত্রঃ ডেইলি মেইল

এম.কে
অক্টোবর ২০২৫

আরো পড়ুন

অবশেষে সিলেটের শত কোটি টাকার বাড়ির রহস্য উদ্ধার

নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত হতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন পরিস্থিতি

তৃতীয় জাতীয় লকডাউনে যুক্তরাজ্য, স্কুল বন্ধ