ইউরোপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করা ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে একধরনের বিভ্রান্তি এবং আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পাসপোর্টের মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও অনেককেই ছুটি কাটাতে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) নতুন ভ্রমণ নিয়ম অনুযায়ী, ব্রিটিশ পাসপোর্টধারীদের জন্য জারি হয়েছে কড়াকড়ি, যা অনেকেই জানেন না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-এর ভ্রমণ বিষয়ক সাংবাদিক সাইমন ক্যালডার সতর্ক করে বলেছেন, ইউরোপ ভ্রমণে যেতে হলে পাসপোর্ট অবশ্যই ১০ বছরের কম পুরোনো হতে হবে। শুধুমাত্র মেয়াদ থাকলেই চলবে না—ইস্যুর তারিখও গুরুত্বপূর্ণ। যেসব পাসপোর্ট ১০ বছর পূর্ণ করেছে, তা ইউরোপের সীমান্তে বৈধ বলে বিবেচিত হচ্ছে না।
তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে পাসপোর্ট সাধারণত ১০ বছরের জন্য ইস্যু হলেও অনেক সময় তা মেয়াদে কয়েক মাস বেশি দেখায়। যেমন কারও পাসপোর্ট ২০১৫ সালের জুনে ইস্যু হয়ে থাকলে তা হয়তো ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ বলা হচ্ছে। কিন্তু ইউরোপীয় নিয়ম অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুনের পর তা আর বৈধ ধরা হচ্ছে না, কারণ পাসপোর্টটি তখন ১০ বছর পূর্ণ করে ফেলেছে।
এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো—আপনি ইউরোপে প্রবেশ করতে চাইলে, এবং সেখানে থেকে যাওয়ার তারিখ অনুযায়ী, পাসপোর্টে অন্তত তিন মাসের মেয়াদ থাকতে হবে। অর্থাৎ আপনি ইউরোপ থেকে ফিরে আসার সময় পর্যন্ত পাসপোর্টে কমপক্ষে তিন মাসের সময় থাকতে হবে, নয়তো প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
ব্রেক্সিটের আগে এসব নিয়ম প্রযোজ্য ছিল না। ব্রিটিশরা ইউরোপের ২৭টি দেশের মধ্যে অবাধে যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ভ্রমণ সম্পর্ক একেবারে বদলে গেছে। এখন তারা “থার্ড কান্ট্রি ন্যাশনাল” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যার ফলে ইউরোপ ভ্রমণে একই নিয়ম প্রযোজ্য হচ্ছে যেমনটা অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ওপর হয়।
ব্রিটিশ নাগরিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, তারা এই নিয়ম জানতেন না। বিমানবন্দরে গিয়ে বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় জানানো হয় যে পাসপোর্ট অকার্যকর, কারণ এটি ইস্যুর পর ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। এতে তাদের ছুটির পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে, অর্থ-সময় দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাসপোর্টের মেয়াদ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এখন শুধু এক্সপায়ারি তারিখ দেখলেই চলবে না—পাসপোর্ট ইস্যু হওয়ার তারিখও খেয়াল রাখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ ২০১৪ সালের আগস্টে পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন, তবে সেটি ২০২৪ সালের আগস্টের পর আর ইউরোপে ভ্রমণে ব্যবহারযোগ্য থাকবে না, যদিও পাসপোর্টে মেয়াদ লেখা থাকতে পারে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এ অবস্থায় সাইমন ক্যালডার পরামর্শ দিয়েছেন, যেসব ব্রিটিশ নাগরিক সামনের মাসগুলোতে ইউরোপীয় দেশে ছুটি কাটাতে যেতে চান, তারা যেন এখনই তাদের পাসপোর্ট যাচাই করেন এবং দরকার হলে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অফিসও ভ্রমণকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে, তারা যেন তাদের পাসপোর্ট ইস্যু ও মেয়াদের বিষয়টি ইউরোপীয় নিয়ম অনুযায়ী যাচাই করে ভ্রমণের প্রস্তুতি নেন।
এই নিয়মের কারণে শুধু সাধারণ পর্যটক নয়, ব্যবসায়ী ও চিকিৎসা সংক্রান্ত ভ্রমণকারীরাও ঝুঁকিতে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার ও এয়ারলাইন্সগুলো যদি এই তথ্য স্পষ্টভাবে যাত্রীদের না জানায়, তাহলে গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ মৌসুমে আরও হাজার হাজার মানুষ এই জটিলতার মুখে পড়বেন।
এটা প্রমাণ করছে, ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাস্তবতায় ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য ভিসাহীন ইউরোপ ভ্রমণ আর আগের মতো সহজ নয়। এখন প্রতিটি ছোটখাটো নিয়মও জানা ও মানা জরুরি, নতুবা বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসা ছাড়া উপায় থাকবে না।
সূত্রঃ দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট
এম.কে
৩০ জুন ২০২৫