17.3 C
London
March 30, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে মসজিদ রক্ষায় আসছে নতুন সুরক্ষা বিল

যুক্তরাজ্যের উপাসনালয় ও উপাসনালয়ের উপাসকদের সুরক্ষা দিতে নতুন পুলিশ ক্ষমতা প্রদান করে সুরক্ষা বিল আসতে যাচ্ছে। তাছাড়া জাতীয় হলোকাস্ট বা স্মৃতিসৌধকে সুরক্ষিত স্থানগুলোর তালিকায় যুক্ত করা হবে বলে এক প্রতিবেদনে জানা যায়।
নতুন ক্ষমতার অধীনে, পুলিশ উপাসনালয়গুলোর চারপাশে ভয়ভীতি প্রদর্শনমূলক প্রতিবাদ ঠেকাতে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এই নতুন উদ্যোগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ ও পুলিশিং বিলের একটি সংশোধনী হিসেবে যুক্ত হবে এবং এটি সিনাগগ, মসজিদ, গির্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকে প্রতিবাদকারীদের দ্বারা সৃষ্ট ভয়ভীতি ও বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করবে।

এই পরিবর্তনগুলো বিদ্যমান পাবলিক অর্ডার অ্যাক্টের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে এবং এতে নতুন একটি সীমা নির্ধারণ করা হবে, যার মাধ্যমে পুলিশ নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিবাদ মিছিলের পথনির্দেশ ও সময় নির্ধারণ। যদি মনে করা হয়, কোনো প্রতিবাদের কারণে উপাসনালয়ে আগতদের ভীত বা আতঙ্কিত করার সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে পুলিশ। নতুন সুরক্ষা বিল পুলিশের জন্য পরিষ্কার নির্দেশনা দেবে, যাতে তারা ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকে সুনির্দিষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা থেকে রক্ষা করতে পারে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাজ্যে একাধিকবার বিভিন্ন ঘটনার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ধর্মীয় উপাসনালয় সিনাগগের আশপাশে প্রতিবাদ কর্মসূচির কারণে শব্বাথ-এর অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত ঘটেছে এবং উপাসকরা ভয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা যায়। বিশেষত লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে বৃহৎ মিছিলের কারণে ধর্মীয় উপাসনালয়ে যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে জানায় পুলিশ প্রশাসন।

একইভাবে, যুক্তরাজ্যে গত গ্রীষ্মে সহিংস অস্থিরতার সময়, সাউথপোর্ট, হল, সান্ডারল্যান্ডসহ অন্যান্য অঞ্চলে মসজিদ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। যা স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল

সুরক্ষা বিল পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হচ্ছে, যখন ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্চ ২০২৪ সালে শেষ হওয়া বছরের হিসাবে দেখা গেছে, পুলিশের নথিভুক্ত ইহুদিবিরোধী ঘৃণামূলক অপরাধ ১১৩% বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং মুসলিমবিরোধী অপরাধ ১৩% বেড়েছে।

স্বরাষ্ট্রসচিব ইভেট কুপার ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাজ্যের সংসদের পাশে নির্মিতব্য নতুন হলোকাস্ট স্মৃতিসৌধের জন্য অতিরিক্ত সুরক্ষা নতুন বিলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে। স্মৃতিসৌধে উঠলে বা তাতে ভাঙচুর চালালে অপরাধীরা কারাদণ্ডের সম্মুখীন হবে।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বলেছেন, “ প্রতিবাদের অধিকার আমাদের গণতন্ত্রের একটি মূল ভিত্তি, যা অবশ্যই রক্ষা করা উচিত। তবে এতে কারও মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘন বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের সুযোগ থাকতে পারে না।

তাই আমরা পুলিশকে উপাসনালয়ের সামনে আক্রমণাত্মক প্রতিবাদ ঠেকানোর জন্য আরও শক্তিশালী ক্ষমতা প্রদান করছি, যাতে মানুষ শান্তিতে প্রার্থনা করতে পারে।”

এই নতুন পদক্ষেপের ফলে হলোকাস্টে নিহত ৬০ লাখ ইহুদি ও অন্যান্য নাৎসি নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে তৈরি হওয়া স্মৃতিসৌধটি যথাযথ নিরাপত্তা পাবে।

এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে আসছে, যখন প্রতিবাদকারীরা বিভ্রান্তিকর এবং ধ্বংসাত্মক কৌশল অবলম্বন করছে, যা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। বিলের নতুন সংশোধনী প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিসৌধগুলোর মতোই হলোকাস্ট স্মৃতিসৌধকে সুরক্ষিত তালিকায় সংযুক্ত করবে।

নতুন ব্যবস্থায় প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করবে না, বরং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে। বর্তমান ব্যবস্থার আলোকে, পুলিশকে বিশ্লেষণ করতে হবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, কোনও নির্দিষ্ট প্রতিবাদে শর্ত আরোপ করা প্রয়োজন কি না। এর উদ্দেশ্য মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং জনগণের দৈনন্দিন জীবনের নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য রাখা।

নতুন আইন ছাড়াও, সরকার ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আগামী বছরে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দিচ্ছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:

ইহুদি সম্প্রদায়ের সুরক্ষা অনুদান: ১৮ মিলিয়ন পাউন্ড।

মসজিদ ও মুসলিম ধর্মীয় স্কুলগুলোর সুরক্ষা: ২৯.৪ মিলিয়ন পাউন্ড।

অন্যান্য ধর্মীয় স্থান ও সম্প্রদায়িক কেন্দ্রগুলোর জন্য: ৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ড।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়াঃ

লর্ডস মিনিস্টার ফর ফেইথের লর্ড খান, কমিউনিটি ও পুনর্বাসন নিয়ে বলেন:

“প্রত্যেকেরই মুক্তভাবে এবং নিরাপদে তাদের ধর্ম পালন করার অধিকার থাকা উচিত। কারও যেন তার উপাসনালয়ে যাওয়ার সময় ভয় পেতে না হয়।

গণতন্ত্রে প্রতিবাদের অধিকার গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা যেন ভয় বা আতঙ্ক সৃষ্টি না করে। এই নতুন ক্ষমতা উপাসনালয়গুলোর জন্য সরকারি নিরাপত্তা আরও কার্যকর করবে।”

কমিউনিটি সিকিউরিটি ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী মার্ক গার্ডনার বলেন,

“লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের সিনাগগগুলোর ওপর ধারাবাহিক বড় ও উচ্চস্বরে প্রতিবাদ হয়ে থাকে। যেখানে প্রায়ই ইহুদিবিরোধী বক্তব্য এবং সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার প্রতি সমর্থন দেখা গেছে, তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

আমরা এই নতুন পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই, যা ইহুদি সম্প্রদায়ের শান্তিতে উপাসনার অধিকার নিশ্চিত করবে।”

ব্রিটিশ ইহুদি উপদেষ্টা বোর্ডের সভাপতি ফিল রোজেনবার্গ বলেন;

“আমরা স্বরাষ্ট্রসচিবের ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যার জন্য আমরা কয়েক মাস ধরে আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম।

সিনাগগগুলোর আশপাশে প্রতিবাদ গত ১৮ মাসে আমাদের ধর্মীয় জীবনে গুরুতর ব্যাঘাত ঘটিয়েছে, এবং মসজিদের সামনে ভয়ভীতি প্রদর্শনমূলক প্রতিবাদও একইভাবে অগ্রহণযোগ্য ছিল।

নতুন আইনের ফলে ধর্মীয় উপাসনার স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা হবে।”

ম্যানচেস্টারের বিশপ, ডেভিড ওয়াকার বলেন,

“মানুষের নিরাপদে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের ধর্ম পালন করার অধিকার থাকা উচিত।

আমি সরকারের উপাসনালয়গুলো সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানাই এবং এই প্রস্তাবগুলো আরও বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করতে আগ্রহী।”

পুলিশকে দেওয়া নতুন প্রতিবাদ-নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ১৯৮৬ সালের পাবলিক অর্ডার অ্যাক্টের ধারা ১২ এবং ১৪-এর আওতায় আসবে, যা পুলিশকে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশের উপর শর্ত আরোপের ক্ষমতা দেবে বলে জানা যায়।

সূত্রঃ ইউকে ডট গভ

এম.কে
২৮ মার্চ ২০২৫

আরো পড়ুন

ইউকে ব্যাংকগুলি প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিচ্ছে

রানিকে শেষ বিদায় জানাতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য গাইডলাইন

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের কর্মসংস্থান অধিকার পরিকল্পনায় এজেন্সি কর্মীদের জন্য নিশ্চিত কর্মঘণ্টার ব্যবস্থা