যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মারের পরিকল্পিত মানব পাচার বিরোধী আইন শত শত আশ্রয়প্রার্থীকে অপরাধী বানানোর ঝুঁকি তৈরি করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে শরণার্থী দাতব্য সংস্থাগুলো। জানা গেছে, যারা ফরাসি কর্তৃপক্ষের উদ্ধার প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করবে, তারা পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে পারে।
এছাড়াও, যারা ছোট নৌকায় তাদের সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসবেন, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত তাদের পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন করতে পারে বলে সীমান্ত নিরাপত্তা, আশ্রয় ও অভিবাসন বিলের মানবাধিকার মূল্যায়নে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংসদে উত্থাপিত এই বিলের মাধ্যমে মানব পাচারকারীদের ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনানুযায়ী পুলিশকে মানব পাচার সন্দেহভাজনদের ল্যাপটপ, আর্থিক সম্পদ ও মোবাইল ফোন জব্দ করার ক্ষমতাও দেওয়া হবে।
ক্যাম্পেইনাররা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিলটি কনজারভেটিভ সরকারের কঠোর নীতিগুলোর কিছু বজায় রেখেছে, যার মধ্যে রয়েছে আধুনিক দাসত্বের শিকার বলে দাবি করাকে কঠিন করা এবং নিরাপদ ও বৈধ পথে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের সীমা নির্ধারণ করার ক্ষমতা দেওয়া।
শরণার্থী সংস্থাগুলো বলছে, এই বিল আশ্রয়প্রার্থীদের অপরাধী বানাতে পারে, বিশেষ করে যারা যুক্তরাজ্যে আসার পথে পাচারকারী চক্রের সাহায্য নিতে বাধ্য হয়। এতে চ্যানেল পারাপার আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
শরণার্থী সংস্থার প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন বলেন, “ আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে নতুন অপরাধমূলক বিধান তৈরি করে অনেক শরণার্থীকে দোষী সাব্যস্ত করা হতে পারে, যা ইতোমধ্যেই কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। এটি ন্যায়বিচারের গুরুতর ব্যর্থতা হবে।
সুদানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে পালিয়ে আসা পুরুষ, নারী ও শিশুদের অপরাধী বানানো মানব পাচারকারীদের ব্যবসা মডেলকে ব্যাহত করবে না। যখন একজন শরণার্থী অস্ত্রধারী পাচারকারীর হুমকির মুখে নৌকায় উঠছে, তখন তারা যুক্তরাজ্যের আইন নিয়ে ভাবছে না—তারা কেবল বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।”
অ্যাসাইলাম এইড-এর একজন মুখপাত্র বলেছেন, প্রীতি প্যাটেলের অবৈধ অভিবাসন আইন বাতিল না করায় আলবেনিয়া, জর্জিয়া ও ভারতের মতো দেশগুলোর আশ্রয় ও মানবাধিকার সংক্রান্ত দাবি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অগ্রহণযোগ্য হবে।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অ্যালিসন পিকআপ বলেন:
“অধিকতর অপরাধীকরণ এবং আশ্রয়ের পথ বন্ধ করে দেওয়া বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির কারণ দূর করবে না বা ইউরোপ হয়ে যুক্তরাজ্যে আসার অননুমোদিত চলাচল থামাবে না।”
২০১৮ সাল থেকে ১,৫০,০০০-র বেশি মানুষ ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে এসেছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকেই ১,০০০-এর বেশি মানুষ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছে।
গত বছর চ্যানেল পার হতে গিয়ে ৭৮ জন মারা গেছে, কারণ পাচারকারীরা একটি দুর্বল ডিঙি নৌকায় ১২০ জন পর্যন্ত যাত্রী উঠিয়ে পারাপার করে থাকে।
বিলটিতে আরও বলা হয়েছে,
ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রায় অন্যদের জীবন বিপন্ন করাকে অপরাধ ঘোষণা করা হবে।
উদ্ধার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
পাচারকারী চক্রের জন্য নৌকা সরবরাহ বা যন্ত্রাংশ ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ১৪ বছরের কারাদণ্ড পেতে পারেন।
সন্দেহভাজন পাচারকারীদের লেনদেন ও অনলাইন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হবে।
হিউম্যান রাইটস বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অভিভাবকরা যদি শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় নিয়ে যান, তবে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হতে পারে, যা পরিবার হতে বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি তৈরি করবে।
দাতব্য সংস্থা Freedom from Torture-এর সহযোগী পরিচালক নাতাশা সাঙ্গারিডেস বলেন:
“এই বিল শরণার্থীদের জন্য আরো বিপজ্জনক হবে এবং কোনোভাবেই মানব পাচারের মূল কারণ দূর করবে না।
যদি সরকার সত্যিই শরণার্থীদের সমস্যা সমাধান করতে চায়, তবে তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত অত্যাচার ও সংঘাত বন্ধ করা, যা মানুষকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
৩১ জানুয়ারি ২০২৫