যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব পরীক্ষায় ভয়াবহ প্রতারণার ঘটনায় চার বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এক নারীকে। লন্ডনের এনফিল্ড এলাকার বাসিন্দা জোসেফিন মোরিস নানা রকম ছদ্মবেশ ও উইগ ব্যবহার করে মোট ১৩ জন আবেদনকারীর হয়ে ‘লাইফ ইন দ্য ইউকে’ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন।
২০২২ সালের ১ জুন থেকে ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিনি স্ট্র্যাটফোর্ড, লুটন, হাউন্সলো, রিডিং, অক্সফোর্ড, নটিংহাম ও মিল্টন কেইন্স সহ একাধিক কেন্দ্র ঘুরে এই প্রতারণা চালিয়ে যান।
স্নেয়ার্সব্রুক ক্রাউন কোর্টে বিচারক অ্যান্থনি ক্যালাওয়ে মোরিসের কর্মকাণ্ডকে যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার ওপর “একটি সুপরিকল্পিত ও সরাসরি হামলা” হিসেবে উল্লেখ করেন।
লাইফ ইন দ্য ইউকে টেস্ট হলো ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য একটি বাধ্যতামূলক ধাপ। এতে ২৪টি প্রশ্নের মাধ্যমে আবেদনকারীর ব্রিটিশ সমাজ, ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানের মূল্যায়ন করা হয়।
মোরিস এই পরীক্ষাগুলোতে নারী ও পুরুষ উভয়ের ছদ্মবেশ নিয়ে উপস্থিত হতেন এবং ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মূল আবেদনকারীর হয়ে টেস্ট দিতেন। তার বাসা থেকে একাধিক ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অন্যান্য নথিপত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রসিকিউশনের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি একটি “ভালোভাবে সংগঠিত প্রতারণা” হলেও আর্থিক লাভের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী জানান, মোরিস ছিলেন একজন বাসচালক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ ছেলের দেখভাল করতেন। “একজনকে সহায়তা করতে গিয়ে নিজেকে ভয়াবহ বিপদে ফেলে দিয়েছেন,” বলেও জানান তিনি।
বিচারক বলেন, “এই প্রতারণা ছিল অত্যন্ত সচেতন, সুপরিকল্পিত এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।”
এই ঘটনায় দেশজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে নাগরিকত্ব পরীক্ষার নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতারণা প্রতিরোধে আরও কঠোর নজরদারি ও যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের মতো একটি উন্নত দেশে নাগরিকত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন জালিয়াতি কেবল আইনি অপরাধ নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা ও নীতিগত কাঠামোর ওপর একটি সরাসরি আঘাত। এই মামলার রায় ভবিষ্যতের প্রতারকদের জন্য একটি কঠিন বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
২২ মে ২০২৫