২৬ বছর বয়সী বেন* যখন জুন মাসে উজবেকিস্তান থেকে বিমানে উঠেছিলেন, তখন তিনি শুধুমাত্র ব্রিটিশ খামারে গ্রীষ্মকালীন চাকরি করার চেয়েও বেশি কিছু আশা করছিলেন।
বেন বলেন, “আমি নতুন স্থান দেখতে এসেছিলাম, এমন শহর যেখানে আগে কখনও যাইনি। আমি বন্ধুত্ব করতে, ধারণা বিনিময় করতে এবং নতুন স্মৃতি তৈরি করতে চেয়েছিলাম।”
কিন্তু স্কটল্যান্ডের যে খামারে তিনি কাজ করছিলেন, সেখানে মালিকদের আচরণ কঠোর এবং শ্রমিকদের প্রতি অসংবেদনশীল বলে মনে হয়েছে বেনের। বেতনের সময় এলে, বেন দেখেন যে তাকে সমস্ত কাজের জন্য যথাযথ পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি।
বেন জানান, “আমি অবাক হয়েছিলাম, কারণ নিয়োগকর্তা ইচ্ছে মতো বেতন দেয়, যা অনেক সময় চুক্তির শর্ত অনুযায়ী হয় না। তারা নানা অজুহাত দেখায়।”
বেন হলেন সেই বহু অভিবাসী শ্রমিকদের একজন, যারা অভিযোগ করেছেন যে তাদের মজুরি কর্মঘণ্টার ভিত্তিতে না দিয়ে ফসল তোলার পরিমাণের ওপর দেওয়া হয়েছে। গত বছর প্রায় ৪৫,০০০ শ্রমিক বিদেশ থেকে যুক্তরাজ্যের কৃষি খাতে অস্থায়ীভাবে কাজ করতে এসেছিলেন। ২০১৯ সালে চালু হওয়া মৌসুমি কর্মী ভিসা কর্মসূচিটি ব্রেক্সিট-পরবর্তী শ্রমিক সংকট সমাধানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
স্কটল্যান্ড-ভিত্তিক এনজিও ওয়ার্কার সাপোর্ট সেন্টার (WSC) যুক্তরাজ্যজুড়ে মৌসুমি শ্রমিকদের সহায়তা করে। তারা জানিয়েছে গত বছর তাদের সাথে বেতন সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে যোগাযোগ করা ৯৯ জন শ্রমিকের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অভিযোগ করেছেন, তারা বেতন পাননি কারণ তাদের মজুরি ফসল তোলার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছিল। এতে কর্মস্থলে যাতায়াত, দলগত বৈঠক বা অন্য কাজের জন্য ব্যয় করা সময় গণনা করা হয়নি এবং তার জন্য মজুরিও দেওয়া হয়নি।
ওয়ার্কার সাপোর্ট সেন্টার, ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (TUC), অ্যান্টি-স্লেভারি ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো লো-পে কমিশনে (Low Pay Commission) আবেদন করেছে। যেখানে তারা এইচএমআরসি (HMRC) কর্তৃক একটি তদন্ত চালানোর আহ্বান জানায়। লো পে কমিশনের চেয়ারপার্সন ফিলিপা স্ট্রাউড বলেন, ওয়ার্কার সাপোর্ট সেন্টার-এর দেওয়া তথ্য তাকে উদ্বিগ্ন করেছে।
যদিও আইন অনুযায়ী ইংল্যান্ডে সমস্ত মৌসুমি শ্রমিকদের ন্যাশনাল লিভিং ওয়েজ এবং স্কটল্যান্ডে কৃষি ন্যূনতম মজুরি প্রদান করা বাধ্যতামূলক। তবুও ওয়ার্কার সাপোর্ট সেন্টার জানায় যে টার্গেট-ভিত্তিক বেতন এবং জটিল পে-স্লিপ (বেতন বিবরণী) থাকার কারণে শ্রমিকদের জন্য তাদের ঘণ্টাভিত্তিক পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে যায়। অনেক শ্রমিক বিশ্বাস করেছিলেন যে তারা ঘণ্টাপ্রতি মজুরি পাবেন, কিন্তু যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পরই তাদের ফসল তোলার লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি জানানো হয়। যারা নিজেদের কাজের বিস্তারিত হিসাব রাখতেন, তারা দেখতে পান যে তাদের পে-স্লিপে থাকা অর্থের পরিমাণ তাদের কর্মঘণ্টার সাথে মিলছে না।
ওয়ার্কার সাপোর্ট সেন্টার স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের ১১টি খামারের ১৮ জন শ্রমিকের ৩৮টি পে-স্লিপ বিশ্লেষণ করেছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি পে-স্লিপে কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য অর্থ প্রদান করা হয়েছে, এবং মাত্র একটিতে বিরতির জন্য অর্থ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ৩৪টি পে-স্লিপে দলগত বৈঠক বা প্রতিদিন কাজ শুরুর আগে নির্দেশনা ও সরঞ্জাম গ্রহণের সময়ের জন্য কোনও বেতন দেওয়া হয়নি।
সংবাদমাধ্যম অবজারভার-এর তদন্তে দেখা পে-স্লিপগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের নাম ও ওজন অনুযায়ী জটিল তালিকা ছিল। যেখানে মজুরি মূলত ফসলের পরিমাণের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে।
ওয়ার্কার সাপোর্ট সেন্টার-এর অপারেশনস ম্যানেজার ভ্যালেরিয়া রাগনি বলেন, “ওয়ার্কার সাপোর্ট সেন্টার-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই শ্রমিকরা তাদের কাজের সম্পূর্ণ সময়ের জন্য মজুরি পাননি বলে মনে হচ্ছে।”
রাগনি জানান, “কিছু ক্ষেত্রে এমনকি নিয়োগকর্তারাও স্বীকার করেছেন যে তারা পে-স্লিপ বুঝতে সমস্যায় পড়েন। কিছু পে-স্লিপ এতটাই জটিল যে এগুলো শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব করে তোলে। আমাদের এমন পে-স্লিপ দরকার যেখানে স্পষ্টভাবে কর্মঘণ্টা উল্লেখ থাকবে এবং নিয়োগকর্তারা কীভাবে বেতন নির্ধারণ করেন, তা ব্যাখ্যা থাকবে, যাতে শ্রমিকরা নিশ্চিত হতে পারেন যে তারা যথাযথভাবে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন।”
রাগনি আরও বলেন, এই সমস্যার মাত্রা আরও অনেক বড় হতে পারে, কারণ মৌসুমি শ্রমিকদের অনিরাপদ ভিসা অবস্থানের কারণে তারা অভিযোগ জানাতে ভয় পান।
ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস-এর মহাসচিব পল নাওয়াক বলেন, “প্রত্যেক শ্রমিকের উচিত তাদের কাজের ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়া। শোষণকারী মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়।”
লো-পে কমিশনের চেয়ারপার্সন স্ট্রাউড বলেন, তিনি মৌসুমি শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা আরও গভীরভাবে জানতে চান। বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে অভিবাসী শ্রমিকরা কম মজুরি পাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে এবং তারা সাধারণত অভিযোগ জানায় না।”
একজন সরকারি মুখপাত্র জানান, সরকার মৌসুমি কর্মসূচির পরিচালকদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছে, যাতে অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। তিনি আরও বলেন, “যেখানে আমরা কোনও অপব্যবহার দেখতে পাব, সেখানে আমরা অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেব।”
*নাম পরিবর্তিত
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৪ ডিসেম্বর ২০২৫