যুক্তরাজ্যে রেসিডেন্ট ডাক্তারদের ২৯ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য খাতে নতুন করে অচলাবস্থার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (BMA) নতুন কাউন্সিল চেয়ার ড. টম ডলফিন জানিয়েছেন, এই দাবি কোনোভাবেই আলোচনার টেবিলে আপসযোগ্য নয়, কারণ এটি ২০০৮ সালের পর থেকে প্রকৃত আয় হ্রাসের প্রতিফলন।
ডলফিন বলেন, ২৯ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি নীতিগত ও বাস্তবসম্মত। “এই সংখ্যা বড় মনে হতে পারে, কিন্তু এটি এনএইচএস-এর বার্ষিক বাজেটের তুলনায় খুবই সামান্য—মাত্র ০.৫ শতাংশেরও কম।” তিনি জানান, দাবির মোট ব্যয় ১.৭৩ বিলিয়ন পাউন্ড হলেও কর বাবদ ফেরতের পর প্রকৃত খরচ দাঁড়াবে ৯২০ মিলিয়ন পাউন্ড।
সরকারের মন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং গত বছর দুই ধাপে ২২ শতাংশ বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও, চলতি বছরে মাত্র ৫.৪ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন, যা বিএমএর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ডলফিন অভিযোগ করেন, এই প্রস্তাবে বেতন পুনরুদ্ধারের কোনো উপাদান নেই এবং এতে ডাক্তারদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান অবস্থায় সরকার যদি নমনীয় না হয়, তবে ডাক্তারদের ধর্মঘটের এই আন্দোলন আরও কয়েক বছর চলতে পারে। ইতিমধ্যে তারা মার্চ ২০২৩ থেকে জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত ১১ দফায় ৪৪ দিন ধর্মঘট করেছে।
ডলফিন অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, দাবি ধাপে ধাপে পরবর্তী তিন বছরে পূরণ করা হলে সমঝোতার পথ খোলা থাকতে পারে। “চলতি বছরে ৫.৪ শতাংশের চেয়ে কয়েক শতাংশ বেশি, এরপরের বছরে আরও কিছু—এভাবে ২৯ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব,” বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিএমএর অবস্থানকে “অযৌক্তিক ও দায়িত্বহীন” বলে অভিহিত করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, কিন্তু ধর্মঘটের হুমকি দিয়ে সমাধান আসবে না। এখনো সময় আছে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আলোচনায় ফিরে আসার।”
এদিকে, লেবার দলের পিয়ার এবং প্রখ্যাত চিকিৎসক প্রফেসর রবার্ট উইনস্টন বিএমএর সদস্যপদ ত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, “এই সময় ধর্মঘট করা অত্যন্ত বিপজ্জনক ও জনসচেতনতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রোগীদের দুর্বল অবস্থার কথা ডাক্তারদের মনে রাখা উচিত।”
এনএইচএস কনফেডারেশন জানিয়েছে, এই ধর্মঘট চলতে থাকলে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২৯ সালের মধ্যে ৯২ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা ১৮ সপ্তাহে নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। এরই মধ্যে অন্যান্য কর্মসূচি ও অস্ত্রোপচার বাতিল হওয়ার ঝুঁকিও বেড়েছে।
সরকার ও বিএমএর এই সংঘাত এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। উভয় পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড়, আর ভুক্তভোগী হয়ে পড়ছে সাধারণ রোগীরা। বিশ্লেষকদের মতে, ধর্মঘট এড়াতে দুই পক্ষেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরি হয়ে উঠেছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১১ জুলাই ২০২৫