23.8 C
London
June 12, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর শত কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন যুক্তরাজ্যের একাধিক সম্পত্তি জব্দ করেছে—এমন তথ্য প্রকাশ করেছে আল জাজিরার অনুসন্ধানী ইউনিট (আই-ইউনিট)। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চৌধুরীর মালিকানাধীন সম্পদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাজ্যে আইনি অনুরোধ পাঠানোর পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। চৌধুরী এখন-নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেত্রী ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত করছে।

গতকাল রাতে আই-ইউনিটকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এনসিএ-র একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেন, “আমরা নিশ্চিত করছি যে, একটি চলমান নাগরিক তদন্তের অংশ হিসেবে এনসিএ একাধিক সম্পত্তির বিরুদ্ধে ফ্রিজিং অর্ডার পেয়েছে।” এই আদেশের ফলে চৌধুরী তার এসব সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন না। যুক্তরাজ্যের পুলিশ সংস্থা, যাকে প্রায়ই “ব্রিটেনের এফবিআই” বলা হয়, তাদের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের চলমান লন্ডন সফরের সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।
গত বছর আল জাজিরা প্রকাশ করেছিল যে ৫৬ বছর বয়সী চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক। যদিও এনসিএ ঠিক কতগুলো সম্পত্তি জব্দ করেছে তা এখনও জানা যায়নি, তবে আই-ইউনিট নিশ্চিত করেছে যে লন্ডনের সেন্ট জনস উড এলাকায় অবস্থিত চৌধুরীর ১.১ কোটি পাউন্ড (১৪.৮ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের বিলাসবহুল বাড়িটিও এই জব্দের তালিকায় রয়েছে।
এই বাড়িতেই আল জাজিরার আই-ইউনিটের গোপন রিপোর্টাররা গোপনে ভিডিও ধারণ করেন। দীর্ঘমেয়াদি এক অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তারা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন, তখন তিনি এখনও সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। সেই সাক্ষাতে চৌধুরী খোলামেলা ভঙ্গিতে তার বৈশ্বিক সম্পত্তি সাম্রাজ্য সম্পর্কে বলেন এবং জানান, তিনি দামি স্যুট ও ডিজাইনার “বেবি ক্রক” চামড়ার জুতার প্রতি আসক্ত। তিনি জানান, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ—“আমি তার সন্তানের মতো”—এমন মন্তব্য করেন তিনি। আরও বলেন, “তিনি জানেন আমি এখানে ব্যবসা করি।”
আই-ইউনিট জানায়, চট্টগ্রামের প্রভাবশালী পরিবার থেকে আসা চৌধুরী বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আইনের অধীনে বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বাইরে নেওয়ার সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তদন্তে দেখা যায়, তিনি লন্ডন, দুবাই ও নিউ ইয়র্কে ৫০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের সম্পত্তি কিনেছেন, অথচ এই বিদেশি সম্পদগুলো কখনো তার বাংলাদেশি কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি।
এই গোপন সাক্ষাৎকার ছিল আল জাজিরার প্রামাণ্যচিত্র “দ্য মিনিস্টার’স মিলিয়নস”-এর একটি অংশ, যা গত বছরের অক্টোবর মাসে সম্প্রচারিত হয়।
চৌধুরী ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে শতাধিক মানুষ নিহত হলে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। এরপর বাংলাদেশের নতুন প্রশাসন তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করে।
এই গণঅভ্যুত্থান ও সহিংসতার পর আই-ইউনিট চৌধুরীর অবস্থান খুঁজে পায় লন্ডনের বাড়িতে। সেখানে তাকে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের আশেপাশে অবস্থিত অভিজাত এলাকায় নির্ভারভাবে হাঁটতে দেখা যায়।
আল জাজিরাকে দেওয়া পূর্ববর্তী বিবৃতিতে চৌধুরী দাবি করেন, বিদেশি সম্পত্তি কেনার অর্থ এসেছে বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশে পরিচালিত বৈধ ব্যবসা থেকে, যেগুলো তার বহুদিনের মালিকানাধীন। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে এই তদন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এটি একটি “উইচ-হান্ট” বা প্রতিহিংসামূলক অভিযান।
সূত্রঃ আল জাজিরা
এম.কে
১২ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

পার্বত্য তিন জেলায় সংঘর্ষ, যা জানালো আইএসপিআর

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গভর্নরের নামে ভুয়া আইডি, সতর্ক করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

জুলাই-আগস্টে আহত শিক্ষার্থীদের আজীবন বেতন-টিউশন ফি মওকুফ