16.5 C
London
May 7, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসায় দমননীতি উচ্চশিক্ষায় অর্থসংকট আরও বাড়াবে

যুক্তরাজ্যের সরকার আশ্রয় আবেদন হ্রাস করার উদ্দেশ্যে ছাত্র ভিসা আবেদনের ওপর কড়াকড়ি আরোপের পরিকল্পনা করছে, তা দেশের অর্থসংকটে ভোগা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য পরিস্থিতি “উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ” করে তুলবে বলে সতর্ক করেছে ইউনিভার্সিটিজ ইউকে (UUK)।

একটি নতুন অভিবাসন হোয়াইট পেপার প্রকাশের আগে জানা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের ছাত্র ভিসা আবেদনের ওপর নজরদারি বাড়ানো হতে পারে, যাদের ব্রিটেনে থেকে যাওয়া ও আশ্রয় প্রার্থনার সম্ভাবনা বেশি বলে ধরা হয়।

ইউনিভার্সিটিজ ইউকে-এর প্রধান নির্বাহী ভিভিয়েন স্টার্ন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি সংকটময় মূহুর্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন যেকোনো ভিসা কড়াকড়ি তাদের বিদেশি শিক্ষার্থী সংগ্রহের সক্ষমতা হ্রাস করবে এবং তাদের আয় আরও কমিয়ে দেবে।”

এর আগে পরিবারের সদস্যদের আনার ওপর বিধিনিষেধসহ ছাত্র ভিসায় নানা সীমাবদ্ধতা আরোপের পর থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পড়তে বা কাজ করতে আসা আবেদনকারীদের ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।

সরকার ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির সঙ্গে কাজ করে এসব দেশের আবেদনকারীদের প্রোফাইলিং মডেল তৈরি করছে, যারা পরবর্তীতে আশ্রয় চাইতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছর প্রায় ১০,০০০ মানুষ যারা কাজ বা পড়াশোনার ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন, তারা আশ্রয় চেয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থে হোটেলসহ নানা আবাসনে ছিলেন।

স্টার্ন বলেন, “এই হোয়াইট পেপার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করার ক্ষমতা সীমিত করে দেবে এবং উচ্চশিক্ষা খাতে বিদ্যমান অর্থসংকট আরও খারাপ করবে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকার এই সংকট থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে উপাচার্যদের বেতন ইস্যু সামনে এনেছে, যেখানে বলা হয়েছে— খারাপ ফলাফল দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম প্রকাশ করে ‘লজ্জা দেওয়া হবে’ যদি তারা নির্বাহী পর্যায়ে অতিরিক্ত বেতন প্রদান করে।

টাইমস এর খবরে বলা হয়েছে, শিক্ষা সচিব ব্রিজেট ফিলিপসন এমন একটি লিগ টেবিল প্রকাশ করতে যাচ্ছেন, যেখানে দেখা যাবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ বেতন দেওয়া হচ্ছে অথচ সেখানকার শিক্ষার্থীদের ভালো চাকরি বা উচ্চশিক্ষায় অগ্রগতি হচ্ছে না।

হোয়াইটহল সূত্র জানিয়েছে, “যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাহী বেতন নিয়ে উদাসীন এবং শিক্ষার্থীদের ব্যর্থ করছে, তাদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা আসছে। দায়িত্বহীন ‘আইভরি টাওয়ার’ যুগ শেষ হয়ে গেছে।”

স্টার্ন উপাচার্যদের বেতনকে সমর্থন করে বলেন, তারা কঠিন ও জটিল কাজ করেন এবং তাদের বেতন অনুরূপ দায়িত্বপূর্ণ অন্যান্য পদের চেয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, “এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক কৌশল বাস্তব সংকট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে।”

তিনি যোগ করেন, দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কঠিন অর্থনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে কাজ করছে— যার পেছনে কারণ হলো স্থানীয় টিউশন ফি-এর অবমূল্যায়ন এবং উচ্চ ফি প্রদানকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া। “আমরা চাই সরকার এই সংকট মোকাবেলায় বাস্তব পদক্ষেপ নিক। কৌশলী হোক সরকার এবং বিভ্রান্তি কম ছড়াক।”

ইউনিভার্সিটিজ ইউকে কর্তৃক ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, এক চতুর্থাংশ প্রতিষ্ঠান বাধ্যতামূলক ছাঁটাই করেছে, ৪৯% বিশ্ববিদ্যালয় কিছু কোর্স বন্ধ করেছে, ১৮% পুরো বিভাগ বন্ধ করেছে এবং ১৯% গবেষণায় বিনিয়োগ কমিয়েছে।

৬০% বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমিয়েছে, ৫১% খাবার খরচে কাটছাঁট করেছে এবং ৪৬% তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যয় হ্রাস করেছে।

ডিপার্টমেন্ট ফর এডুকেশনের এক মুখপাত্র বলেন, “শিক্ষা খাতের পুণর্গঠনের অংশ হিসেবে আমরা ব্যয় হ্রাস ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এই সরকার এমন এক খাত উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে যা আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাই আমরা দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কাজ করছি।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৬ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের টিকা প্রয়োগে ব্রিটেনে সতর্কতা  

১৩৯ বছরে সবচেয়ে গরম জুন দেখল যুক্তরাজ্য

নিউজ ডেস্ক

এমপি’র কাজিন বিবাহ নিষিদ্ধ করার আহ্বান পক্ষপাতমূলকঃ চিকিৎসা গবেষক