TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে হাইকোর্টে পরাজিত এপিং কাউন্সিল, হোটেলে আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার অনুমতি বহাল

এ্যাসেক্সের এপিং এলাকার দ্য বেল হোটেল–এ আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিল ও হোম অফিসের মধ্যে চলা আইনি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কাউন্সিল পরাজিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট রায়ে বলেছে, পরিকল্পনা (প্ল্যানিং) আইনের প্রয়োগের জন্য নিষেধাজ্ঞা (injunction) কোনো উপযুক্ত পন্থা নয়।

বিচারপতি মোল্ড মঙ্গলবার এই মামলার রায় দেন। তার ভাষায়, “অল্প কিছু আশ্রয়প্রার্থীর অপরাধমূলক আচরণ স্থানীয়দের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করেছে, তবে এর জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা আইন ভঙ্গ প্রমাণিত হয়নি।” আদালত আরও উল্লেখ করে, বর্তমানে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সরকারের আবাসনের “অব্যাহত প্রয়োজন” রয়েছে, যাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইন অনুযায়ী তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

এর আগে গত আগস্টে হাইকোর্ট এপিং ফরেস্ট ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলকে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, কিন্তু পরে হোম অফিসের হস্তক্ষেপের পর আপিল আদালত তা বাতিল করে। সরকারের পক্ষের যুক্তি ছিল—যদি কাউন্সিলের আবেদন মঞ্জুর হয়, তবে অন্যান্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষও একই পদক্ষেপ নিতে পারে, যা আশ্রয় নীতিকে বিপর্যস্ত করবে। মঙ্গলবারের রায়ে এই বিরোধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়।

রায়ের পর কনজারভেটিভ পার্টি একে “এপিংবাসীর প্রতি চপেটাঘাত” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলপ বলেন, “এপিংয়ের মানুষ তাদের নিজের শহরেই নীরব করে দেওয়া হয়েছে।” কাউন্সিলের কেবিনেট সদস্য কেন উইলিয়ামসন অভিযোগ করেন, “আদালতে আমরা দেখেছি সরকারের ও বড় ব্যবসার আইনজীবীদের এক অশুভ জোট, যারা মুনাফা ও অমানবিক আশ্রয় নীতি রক্ষায় ব্যস্ত।”

অন্যদিকে, হোম অফিস জানায়, এই রায়ের ফলে তারা “পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খলভাবে” আশ্রয় হোটেলগুলো বন্ধ করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারবে। তবে রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন সরকারের বর্তমান নীতিকে “অমানবিক, বিচ্ছিন্নতামূলক ও ব্যয়বহুল” বলে সমালোচনা করেন এবং সামরিক স্থাপনায় আশ্রয়প্রার্থীদের রাখার পরিকল্পনা পরিবর্তনের আহ্বান জানান।

এই হোটেলকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয় এক ইথিওপীয় আশ্রয়প্রার্থী হাদুশ কেবাতুকে যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করার পর। তাকে গত সেপ্টেম্বরে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং পরে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার গ্রেপ্তারের পর হোটেলের বাইরে সহিংস বিক্ষোভ হয়, যেখানে তিনজনকে পুলিশের ওপর হামলার দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিচারপতি মোল্ড বলেন, “জনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দিতে কাউন্সিলের আগ্রহ স্বাভাবিক ছিল, তবে সমাধানটি আইনি নিষেধাজ্ঞা নয়।”
কাউন্সিলের আইনজীবী অভিযোগ করেন, সোমানি হোটেলস পরিকল্পনা আইন পাশ কাটিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে “সরকারি অর্থে লাভের লোভে।”
তবে সরকারের পক্ষের আইনজীবী বলেন, হোটেল কক্ষগুলো ব্লক বুক করা হলেও এর ব্যবহার হোটেল হিসেবেই রয়ে গেছে এবং “জনস্বার্থে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের প্রয়োজন নেই।”

দ্য বেল হোটেল ২০২০ সালের মে মাস থেকে পর্যায়ক্রমে আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার সুযোগ দিচ্ছে। সোমানি হোটেলস জানায়, এটি তাদের জন্য আর্থিকভাবে টিকে থাকার একমাত্র পথ।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা “অস্থায়ী ব্যবহার পরিবর্তনের” অনুমোদনের আবেদন করে, তবে তা নির্ধারিত না হওয়ায় ২০২৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে আবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়।
হোটেলের আইনজীবী জেনি উইগলি কেসি বলেন, পরিকল্পনা আইনের কোনো ভঙ্গ হয়নি, বরং কাউন্সিলের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া “গুরুতরভাবে ত্রুটিপূর্ণ।”

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে নার্সিং সেক্টরে কাজ করতে অনিচ্ছুক কর্মীরা

হিথ্রো বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন নিয়ে জালিয়াতি ঘটনা ফাঁস

যুক্তরাজ্যের রাজ পরিবারে পুরাতন বর্ণবাদী মন্তব্য নিয়ে নতুন আলোচনা