26.4 C
London
July 9, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে হোম অফিসের ভুল সিদ্ধান্তে দুই শিশু যুক্তরাজ্য ছাড়ার মুখে, শেষমেশ পিছু হটল কর্তৃপক্ষ

যুক্তরাজ্যের হোম অফিস দুই ব্রাজিলীয় শিশুকে দেশছাড়া করার নির্দেশ দেওয়ার পর গণমাধ্যমে প্রতিবাদ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও জনমতের চাপে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে অবশেষে পুরো পরিবারকে যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দিয়েছে।

১১ বছর বয়সী গুইলারমে সেরানো ও তার ৮ বছর বয়সী ভাই লুকা প্রায় পুরো শৈশব কাটিয়েছে যুক্তরাজ্যে, যেখানে তাদের মা আনা লুইজা গোভেইয়া এনএইচএসে সিনিয়র নার্স এবং বাবা ড. হুগো বারবোসা এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত।

তবে চলতি বছরের শুরুতে হোম অফিস একটি চিঠিতে শিশুদের ব্রাজিলে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়, যদিও তাদের বাবা-মা যুক্তরাজ্যে বৈধভাবে বসবাস ও কাজ করছেন। চিঠিতে গুইলারমেকে সতর্ক করে বলা হয়, সে যদি যুক্তরাজ্যে থেকে যায়, তাহলে তাকে আটক, বিচার, বাসা ভাড়া ও ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে।

পরিবারটি গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করলে তা ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ এমপি স্টিভ রেইস ও ব্রাজিলীয় কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপে হোম অফিস নতুন করে মামলাটি “ব্যতিক্রমীভাবে পুনর্বিবেচনা” করতে রাজি হয়। শুধু তা-ই নয়, বাতিল হওয়া আবেদনটি পুনরায় বিবেচনার পাশাপাশি প্রায় £৬,০০০ আবেদন ফির অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

ড. বারবোসা বলেন, “এটা আমাদের জন্য বিশাল স্বস্তির। আমি যখন গুইলারমেকে স্কুল থেকে নিয়ে এ খবর জানালাম, সে ছুটে গিয়ে বন্ধুদের জানাল—‘আমাকে আর দেশ ছাড়তে হবে না।’”

হোম অফিসের প্রাথমিক চিঠিতে দাবি করা হয়েছিল, শিশুদের যুক্তরাজ্যে বসবাসের পক্ষে “গুরুতর ও বাধ্যতামূলক কোনো কারণ নেই” এবং তারা ব্রাজিলে গিয়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।

এই জটিলতা তৈরি হয় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর। যদিও তারা সন্তানদের ৫০/৫০ ভাগে লালন-পালন করেন এবং এখনো ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। মা গোভেইয়া ২০২২ সালে নিজের নামে নতুন স্কিলড ওয়ার্কার ভিসা পান, ফলে তিনি এখনও ‘ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন’-এর (ILR) জন্য যোগ্য নন, যেটি সাধারণত ৫ বছর পর প্রযোজ্য হয়।

হোম অফিসের নিয়ম অনুযায়ী, শিশুরা তখনই যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে থাকতে পারে যদি উভয় অভিভাবক সেটল্ড হন বা একজনের কাছে পুরো দায়িত্ব থাকে। এই নিয়মকে অযৌক্তিক ও বাস্তবতাবিবর্জিত বলেই সমালোচনা করেছে অভিভাসন বিশেষজ্ঞরা।

এমপি স্টিভ রেইস বলেন, “আমি খুশি যে হোম অফিস শেষমেশ বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। এই পরিবারকে একত্রে যুক্তরাজ্যে থাকার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে মানবিকতা জয়ী হয়েছে।”

হোম অফিস অবশ্য বলেছে, তারা ব্যক্তিগত মামলার বিষয়ে মন্তব্য করে না, তবে “আইনানুগ ও ন্যায্য” অভিবাসন ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য কাজ করছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনায় আবারো প্রমাণ হলো—হোম অফিসের সিদ্ধান্ত অনেক সময় বাস্তবতা ও মানবিক বিবেচনার বাইরে চলে যায়।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৯ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

প্রজাপতি গুনবে ব্রিটেন

হোম অফিসের অপেশাদার আচরণে বিস্মিত আদালত

ফস্টার কেয়ারারের ঘাটতিঃ যুক্তরাজ্যে গুরুতর সংকটের হুঁশিয়ারি বার্নার্ডোসের