যুক্তরাজ্যের উপকূলে মাদক চোরাচালান রোধে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। চোরাকারবারিরা বর্তমানে ‘অ্যাট-সি ড্রপ-অফস’ (Asdos) নামে পরিচিত পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যেখানে মাদক ‘মাদার শিপ’ থেকে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয় এবং ছোট নৌকা তা সংগ্রহ করে গোপন উপসাগর বা বন্দর দিয়ে দেশে নিয়ে আসে।
সতর্কবার্তাটি এসেছে কর্নওয়ালের ট্রুরো ক্রাউন কোর্টে একটি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান মামলার রায় ঘোষণার পর। এই মামলায় £১৮ মিলিয়ন মূল্যের কোকেন আমদানির ষড়যন্ত্রে জড়িত একটি গ্যাংয়ের চার সদস্যকে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন হ্যাম্পশায়ারের এক জেলে, এসেক্সের তিন ব্যক্তি এবং একজন কলম্বিয়ান, যিনি দক্ষিণ আমেরিকার একটি মাদক কার্টেলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছিলেন।
জাতীয় অপরাধ সংস্থা (NCA) এবং বর্ডার ফোর্সের যৌথ অভিযানে তিনজনকে ৩০ মাইল তাড়া করে নৌকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি চারজনকে বৃহত্তর নেটওয়ার্ক তদন্তের মাধ্যমে আটক করা হয়। বিচারক জেমস অ্যাডকিন এই ঘটনাকে “বৃহৎ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র” বলে উল্লেখ করেন।
বর্ডার ফোর্স মেরিটাইম কমান্ডের পরিচালক চার্লি ইস্টাহ (Charlie Eastaugh) জানান, ‘অ্যাট-সি ড্রপ-অফস’ পদ্ধতি বর্তমানে মাদক চোরাকারবারিদের সবচেয়ে পছন্দের কৌশল। গত বছর এই পদ্ধতিতে ৬.৫ টন কোকেন আটক করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় £৫২০ মিলিয়ন। তবে অনুমান করা হচ্ছে, আরও বিপুল পরিমাণ মাদক যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করছে।
তিনি বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের খাড়া উপকূলরেখা চোরাকারবারিদের জন্য সহজ অবতরণের সুযোগ তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে ‘প্রজেক্ট ক্র্যাকেন’ উদ্যোগের মাধ্যমে উপকূলীয় কমিউনিটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে তারা বর্ডার ফোর্সের চোখ-কান হয়ে কাজ করতে পারে।
সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, চোরাকারবারিরা ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে। ইতোমধ্যে অন্য দেশে পানির নিচে চালিত ড্রোন বা ‘নার্কো সাবমেরিন’ ব্যবহার করে মাদক পাচারের নজির রয়েছে। এই আধুনিক চোরাচালানের পদ্ধতির বিরুদ্ধে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
এনসিএর মাদক হুমকি বিভাগের প্রধান অ্যাডাম থম্পসন জানান, অ্যাট-সি ড্রপ-অফস পদ্ধতি মূলত কর্নওয়ালের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বেশি দেখা যাচ্ছে, তবে আইরিশ সাগর ও নর্থ সিতেও শনাক্ত হয়েছে। চোরাকারবারিরা সমুদ্রে জলরোধী প্যাকেজ ও ভাসমান বয়া দিয়ে মাদক ফেলে এবং ছোট নৌকায় তা তুলে আনে।
তিনি আরও বলেন, কোভিড ও ব্রেক্সিট-পরবর্তী সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পরিবর্তনের কারণে এই পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বিশাল পরিমাণ মাদক পরিবহনে এই পদ্ধতি কার্যকর হওয়ায় গ্যাংগুলো তা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।
আদালত চারজনকে কারাদণ্ড দেয়: স্কট জনস্টন (৩৮) – ২৪ বছর, মাইকেল মে (৪৭) – ১৯ বছর, টেরি উইলিস (৪৪) – ২১ বছর এবং এডউইন ইয়াহির তাবোরা বাক (৩৩) – ১৭ বছর ৭ মাস। আরও তিনজনের সাজা এই মাসের শেষে ঘোষণা করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণকে আহ্বান জানায়, সন্দেহজনক যেকোনো নৌযান বা কার্যকলাপের বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে, যাতে সমুদ্রপথে মাদক চোরাচালান দমন করা সম্ভব হয়।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০২ আগস্ট ২০২৫