হোম অফিসের তত্ত্বাবধানে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়মিত প্রকাশ না করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। মানবাধিকার ও শরণার্থী অধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, আশ্রয় ব্যবস্থায় ঘটে যাওয়া মৃত্যুর প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হচ্ছে এবং স্বচ্ছতার ন্যূনতম মানও রক্ষা করা হচ্ছে না।
বর্তমানে আশ্রয়প্রার্থীদের মৃত্যুর তথ্য জানার একমাত্র উপায় হলো তথ্য অধিকার আইনের (ফ্রিডম অব ইনফরমেশন—FoI) মাধ্যমে আবেদন করা। তবে অভিযোগ রয়েছে, হোম অফিস সব সময় এসব আবেদনের জবাব দেয় না বা অসম্পূর্ণ তথ্য দেয়। বিপরীতে, এনএইচএস নিয়মিতভাবে হাসপাতালে মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করে এবং বিচার মন্ত্রণালয় কারাগারে মৃত্যুর পরিসংখ্যান প্রকাশ করে থাকে।
FoI-এর মাধ্যমে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০২৪ সালে হোম অফিস সরবরাহকৃত আশ্রয় আবাসনে মোট ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ১১ জন বেশি এবং ২০১৯ সালের তুলনায় বারো গুণেরও বেশি বৃদ্ধি। উল্লেখযোগ্যভাবে, হোম অফিস প্রথমে দাবি করেছিল ওই বছরে মাত্র ৩০ জন মারা গেছেন। পরে অতিরিক্ত ২১টি মৃত্যুর তথ্য সামনে আসায় বিভাগটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আশ্রয় ব্যবস্থায় একাধিক আলোচিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিবি স্টকহোম ভাসমান আশ্রয়কেন্দ্রে আলবেনীয় নাগরিক লিওনার্ড ফারুকুর মৃত্যু, ২০২৪ সালের মার্চে চার মাস পর হোম অফিসের আবাসন থেকে ইরানি নাগরিক মেহরাব ওমরানির মরদেহ উদ্ধার এবং ২০২২ সালে কেন্টের ম্যানস্টন প্রসেসিং সেন্টারে ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কুর্দি ইরাকি আশ্রয়প্রার্থী হুসেইন হাসিব আহমেদের মৃত্যু।
২০২৫ সালের বর্ডার সিকিউরিটি, অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন আইনে আশ্রয়প্রার্থীদের মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার একটি সংশোধনী প্রস্তাব আনা হলেও তা পাস হয়নি। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ইউনিট লিবার্টি ইনভেস্টিগেটস তথ্য প্রকাশের দাবিতে তথ্য কমিশনারের কার্যালয়ে (ICO) আপিল করলেও সেখানেও হোম অফিসের পক্ষেই রায় আসে।
আইসিওর মতে, এসব তথ্য প্রকাশ করলে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি ও কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানি বা সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। হোম অফিস দাবি করেছে, নিহতদের নাম বা বিস্তারিত প্রকাশ করলে তাদের স্বজনদের শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে, যা ২০২৪ সালের আগস্টে আশ্রয়কেন্দ্র লক্ষ্য করে হওয়া হামলার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে।
এ অবস্থায় অ্যাসাইলাম ম্যাটার্সসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা আশ্রয় ব্যবস্থায় মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত পরিসংখ্যান প্রকাশের দাবিতে প্রচারণা শুরু করেছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক লুইস ক্যালভি বলেন, আশ্রয় ব্যবস্থার ভেতরে মানুষ আত্মহত্যা করছে, সংক্রামক রোগে মারা যাচ্ছে এবং এমন মৃত্যুও ঘটছে যা এড়ানো সম্ভব ছিল। অথচ প্রকৃত সংখ্যা জানা না থাকায় কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, কারাগারসহ অন্যান্য সরকারি তত্ত্বাবধানে মৃত্যু হলে তা রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক হলেও আশ্রয় ব্যবস্থায় তা না করা একটি লজ্জাজনক ব্যতিক্রম। এতে বার্তা যায় যে, আশ্রয়প্রার্থীদের জীবন রাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বহীন।
হোম অফিস অবশ্য দাবি করেছে, তারা আশ্রয়প্রার্থীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া পুনরায় সক্রিয় করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এক মুখপাত্র বলেন, বিপজ্জনক ছোট নৌকায় চ্যানেল পারাপারের সময় অন্যের জীবন ঝুঁকিতে ফেললে নতুন আইনে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, আইন ও আশ্বাস নয়—স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

