যুক্তরাজ্যে নার্সদের ২৫% বেতন বাড়ানো উচিত এবং যদি সরকার তাদের দাবি না মানে তাহলে তারা আবারও ধর্মঘটে যেতে পারেন বলে যুক্তরাজ্যের নার্সিং পেশার শীর্ষ নেত্রী জানিয়েছেন।
রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং (RCN)-এর মহাসচিব প্রফেসর নিকোলা রেঞ্জার বলেছেন, নার্সরা তাদের হারানো আয়ের পূর্ণ পুনঃস্থাপন চান এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে তারা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত।
দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রফেসর নিকোলা রেঞ্জারের এই মন্তব্যের ফলে সামনের মাসগুলোতে এনএইচএসে কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের নতুন ধর্মঘটের সম্ভাবনা বাড়ছে। নার্সরা তাদের প্রস্তাবিত বেতন নিয়ে অসন্তুষ্ট এবং এর ফলে স্বাস্থ্যসেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। আরসিএনের বার্ষিক কংগ্রেস সভা সোমবার লিভারপুলে শুরু হতে যাচ্ছে।
ইংল্যান্ডের জুনিয়র ডাক্তাররা– ইতিমধ্যে সম্ভাব্য নতুন ধর্মঘটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তারা ১১ দফা ধর্মঘট করেন ৩৫% বেতন বৃদ্ধির দাবিতে। সেই আন্দোলনের ফলে তারা ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ সালের জন্য মোট ২২% বেতন বৃদ্ধির সুবিধা পান।
ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (BMA) স্বাস্থ্য সচিব ওয়েস স্ট্রিটিংকে জুনিয়র ডাক্তারেরা সতর্ক করেছেন। তারা ২০২৫-২৬ সালের জন্য ১০% বেতন বৃদ্ধির দাবি পূরণ না হলে ছয় মাস পর্যন্ত ধর্মঘটে যেতে পারেন। ত্নে সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছে আর্থিকভাবে এই মূহুর্তে জুনিয়র ডাক্তারদের বেতন বাড়ানো প্রায় অসম্ভব।
রেঞ্জার জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, নার্সদের আয় ২০১০ সাল থেকে প্রকৃত অর্থে ২৫% কমেছে এবং সেখান থেকেই তারা ২৫% বেতন বৃদ্ধির দাবি করছেন।
এনএইচএস নেতাদের দাবি,“নার্সিং পেশার বেতন পুনরুদ্ধার করতে হবে। এটি আমাদের আলোচনার শুরু। জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের দাবিতে দৃঢ় ছিল, আমরাও তেমনি। যদি প্রতিটি নার্স এক ঘণ্টার জন্যও কাজ বন্ধ করে দেয়, স্বাস্থ্যসেবায় তার প্রভাব বিপর্যয়কর হবে। তাহলে আমাদের মূল্যায়ন করুন, আমাদের কাজকে সম্মান দিন এবং আমাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিন। নার্সরা এখনও অবমূল্যায়িতএবং তারা অপর্যাপ্ত পারিশ্রমিক পায়।”
যদি সরকার উপযুক্ত বেতন না দেয়, তাহলে আরসিএন কী করবে এর উত্তরে রেঞ্জার বলেন: “আমরা এমন একটি অবস্থানে পৌঁছাবো যেখানে আমাদের জীবনকে বাঁচাতে যুদ্ধ করতে হবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।” তবে তিনি আরও বলেন: “সরকার ধর্মঘট চায় না, আমরাও চাই না।”
যদিও এনএইচএস নেতারা বলেছেন, এই ধরনের হুমকি সমস্যার সমাধানে সহায়ক নয়, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে স্বাস্থ্য খাতের আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে।
এনএইচএস এমপ্লয়ার্স-এর প্রধান নির্বাহী ড্যানি মর্টিমার বলেন: “সরকারের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা। সেইসঙ্গে সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নের উচিত সংঘাতের পথ নয়, সংলাপের মাধ্যমে সমাধান খোঁজা।”
তিনি জানান, NHS ইংল্যান্ডের নতুন প্রধান নির্বাহী স্যার জিম ম্যাকির আদেশে ২১৫টি NHS ট্রাস্টে তহবিল কাটছাঁট ও কঠোর “পুনর্গঠন” চলছে।
ইংল্যান্ডে নার্সরা ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত আট দিন ধর্মঘট করেন। তারা পরে ২০২২-২৩ সালের জন্য £১,৬৫৫ থেকে £৩,৭৮৯ এককালীন অর্থ এবং ২০২৩-২৪ সালের জন্য ৫% বেতন বৃদ্ধি পান।
রেঞ্জার বলেন, নার্স হওয়ার আবেদন কমে যাওয়া এবং আগেভাগে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার হার বেড়ে যাওয়ায়, স্বাস্থ্যসেবা খাতে নিয়োগ ও ধরে রাখার সমস্যা সমাধান না করলে সরকারের NHS সংস্কার পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে।
স্কটল্যান্ডের মন্ত্রীরা NHS নার্স, মিডওয়াইফ ও অন্যান্য কর্মীদের আগামী দুই বছরে ৮% বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন – ২০২৫-২৬ সালের জন্য ৪.২৫% এবং ২০২৬-২৭ সালের জন্য ৩.৭৫%।
NHS-এর “এজেন্ডা ফর চেইঞ্জ” কাঠামোর অধীনে ১৩.৮ মিলিয়ন কর্মীর জন্য নির্ধারিত পে রিভিউ বডি সরকারকে প্রায় ৩% বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে, যা সরকারের ২.৮% প্রস্তাবের চেয়ে কিছুটা বেশি। ডাক্তার ও দাঁতের চিকিৎসকদের বেতন অন্য একটি পরামর্শদাতা সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত হয়। সরকার এখন সুপারিশগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছে।
সরকারের এক মুখপাত্র বলেন: “এই সরকার একটি ভেঙে পড়া NHS পেয়েছে যেখানে কর্মীরা অতিরিক্ত কাজের চাপে, অবমূল্যায়িত এবং মনোবলহীন। আমরা প্রতিভাবান নার্স ও মিডওয়াইফদের কাজকে অত্যন্ত মূল্য দিই এবং আমাদের পরিবর্তনের পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা রোগী ও কর্মীদের কল্যাণে NHS পুনর্গঠন করছি এবং নিশ্চিত করছি যাতে নার্সিং একটি আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে টিকে থাকে। এই সরকারের প্রথম পদক্ষেপগুলোর একটি ছিল নার্সদের জন্য বহু বছর পর প্রথমবারের মতো মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে বেশি হারে বেতন বৃদ্ধি প্রদান, কারণ আমরা স্বীকার করি অতীতে তাদের বেতন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা NHS বেতন রিভিউ বডির সুপারিশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি এবং শিগগিরই হালনাগাদ করব।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১২ মে ২০২৫