২০০৫ সালে লেবার সরকারের আমলে চালু হওয়া “ইমপ্রিজনমেন্ট ফর পাবলিক প্রোটেকশন (IPP)” শাস্তি ব্যবস্থা আজ যুক্তরাজ্যের বিচার ব্যবস্থার একটি গভীর কলঙ্কচিহ্নে পরিণত হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল সমাজকে রক্ষা করা, কিন্তু বাস্তবে এটি হাজারো মানুষকে বছরের পর বছর ধরে অজানা ভবিষ্যতের ফাঁদে আটকে রেখেছে।
২০১২ সালে এই শাস্তি ব্যবস্থা আইনত বাতিল হলেও, ততদিনে যে কয়েদিরা এই শাস্তির আওতায় পড়েছেন, তারা আজও মুক্তির অপেক্ষায় কারাগারে বন্দি। এদের অনেকে এমন অপরাধে আটক, যার জন্য বর্তমানে মাত্র কয়েক বছরের সাজাই যথেষ্ট হতো।
IPP শাস্তির মাধ্যমে বিচারকরা অপরাধীদের অনির্দিষ্টকালীন কারাদণ্ড দিতে পারতেন, এমন অপরাধের জন্য যা যাবজ্জীবন দণ্ডের আওতায় পড়ে না। প্রতিটি সাজার সঙ্গে নির্ধারিত একটি “টারিফ” (সর্বনিম্ন কারাভোগের সময়সীমা) দেওয়া হতো — যা অনেক ক্ষেত্রেই ছিল মাত্র ২ থেকে ৫ বছর। কিন্তু সেই সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও বহু কয়েদি এখনও বন্দি।
এদের মুক্তি নির্ভর করে প্যারোল বোর্ডকে সন্তুষ্ট করার উপর, যে তারা আর সমাজের জন্য হুমকি নন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া এতটাই জটিল ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভেঙে দেওয়ার মতো যে অধিকাংশের মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে থাকে। অপর্যাপ্ত পুনর্বাসনমূলক কার্যক্রম, কারাগারের ভিড়, এবং যথাযথ সহায়তার অভাবে কয়েদিরা বারবার মুক্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এই অনির্দিষ্ট সাজা কয়েদিদের মানসিক স্বাস্থ্যেও ভয়ানক প্রভাব ফেলেছে। আত্মহত্যা ও আত্ম-নিগ্রহের হার IPP কয়েদিদের মধ্যে গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। তারা জানেন না কখন মুক্তি পাবেন, আদৌ পাবেন কি না — ফলে এক ধরনের চিরস্থায়ী হতাশা ও মানসিক নিপীড়নের মধ্যে বসবাস করছেন।
ব্রিটেনের হাউজ অব কমন্সের জাস্টিস কমিটি এই শাস্তি ব্যবস্থাকে “পুনরুদ্ধারযোগ্য নয়” বলে আখ্যা দিয়েছে। ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটসও একে মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে রায় দিয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকার এখনো কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেয়নি, বরং জননিরাপত্তার অজুহাতে এই অন্যায়কে দীর্ঘায়িত করছে।
আইন ও ন্যায়বিচারের মৌলিক নীতি অনুসারে, অপরাধের বিচার হওয়া উচিত অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী নির্ধারিত ও সুস্পষ্ট শাস্তির ভিত্তিতে। IPP শাস্তি সেই নীতিকে সম্পূর্ণভাবে ভঙ্গ করে, যেখানে সাজাভোগের পরও কয়েদিরা মুক্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা পায় না।
ব্রিটেনের হাউজ অব কমন্সের জাস্টিস কমিটি জানায়, এখন সময় এসেছে প্রত্যেক IPP বন্দিকে পুনরায় সাজার আওতায় আনার। এর মাধ্যমে বিচারকেরা নতুন করে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে নির্দিষ্ট সময়সীমার শাস্তি নির্ধারণ করতে পারবেন। এতে অনেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি পাবেন, কেউ কেউ নতুন করে লক্ষ্য নির্ধারণ করে জীবন গড়ার সুযোগ পাবেন।
তাদের মতে, জননিরাপত্তা বজায় রেখে ঝুঁকিপূর্ণ অপরাধীদের ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। আধুনিক বিচার ব্যবস্থা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও প্যারোল নজরদারির মাধ্যমেই তা করা যায়। কিন্তু অনির্দিষ্ট দণ্ড আর নয় — এটি ন্যায়বিচারের চরম পরিহাস।
সূত্রঃ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট
এম.কে
০৮ জুলাই ২০২৫