অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক আশ্রয়প্রার্থীদের টানা দেড় বছর ধরে হোটেলে রাখার সিদ্ধান্ত আইন বর্হিভূত বলে রায় দিয়েছে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট৷
সঙ্গীহীন শিশুদের আবাসন হিসেবে হোটেলের ব্যবহারকে চ্যালেঞ্জ করে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে এভরি চাইল্ড প্রোটেক্টেড অ্যাগেইনস্ট ট্রাফিকিং (ইসিপিএটি) নামের একটি শিশু অধিকার বিষয়ক সংগঠন।
তাদের দায়ের করা মামলার বিচারকাজ শেষে বৃহস্পতিবার সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় দেশটির হাইকোর্ট৷
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানায়, দাতব্য সংস্থাগুলোর মনে করে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা শিশুদের উপযুক্ত নয়৷
৫৫ পৃষ্ঠার রায়ে হাইকোর্টের বিচারক মার্টিন চেম্বারলেইন বলেছেন, এটি ‘বেআইনি’ এবং শুধু ‘বিশেষ কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে খুব অল্প সময়ের জন্য’ হোটেল ব্যবহার করা উচিত।
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে এই প্রথাটি “সিস্টেম্যাটিক এবং রুটিনমাফিক” হয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন বিচারক৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান এ বিষয়ে অনুমতি দিতে ‘‘তার ক্ষমতার যথাযথ সীমা অতিক্রম করেছেন” বলেও মন্তব্য করেন বিচারক৷
বিচারক আরো বলেন, ‘‘ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিকল্প হিসেবে নিয়মিতভাবে হোটেল ব্যবহার করা যায় না৷ কিন্তু এটা যেন রুটিন হয়ে গিয়েছে৷ হোটেলে এভাবে তাদের রাখাটা ঠিক নয়৷’’
হাজারো আশ্রয়প্রার্থী ব্রিটেনে এসে পৌঁছাচ্ছেন, কিন্তু দেশটিতে তাদের থাকার জায়গা নেই৷ আশ্রয় আবেদন উপচে পড়ছে অফিসগুলোতে৷
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইন অনুযায়ী, সব আশ্রয়প্রার্থীর আবাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় সরকারগুলোর৷ অন্যদিকে, আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াধীন থাকার সময় কাজের অনুমতি দেয়া হয় না আশ্রয়প্রার্থীদের৷ ফলে, তাদের পক্ষে নিজে উদ্যোগে বাসস্থান খুঁজে নেয়াটা সম্ভব নয়৷
এর মধ্যে রয়েছে হাজারো শিশু, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ছোট নৌকায় চ্যানেল পেরিয়ে এসেছে৷ তাদের অনেকের সঙ্গে নেই কোনো অভিভাবক৷
এরপর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত হোটেলগুলোকে রুটিনমাফিক ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়ে একাধিক অভিযোগ ওঠে৷
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসের ১৭ জুলাই পর্যন্ত হোটেলগুলোতে ২০৮ জন শিশু আশ্রয়প্রার্থীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্দিষ্ট হোটেলগুলো কেন্ট, পূর্ব সাসেক্স, লন্ডন, অক্সফোর্ডশায়ার এবং ওয়ারউইকশায়ারে অবস্থিত।
এ বছরের ৩ এপ্রিল থেকে ৪৪৭ টি শিশু আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিখোঁজ হয়। বেশিরভাগই যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিখোঁজ হয়।
বিশ্ববার্তা সংস্থা জানিয়েছে, চলতি মাসে এই সংক্রান্ত শুনানির সময় জানা যায়, হোটেল থেকে ১৫৪টি শিশু এখন পর্যন্ত নিখোঁজ, যার মধ্যে একজনের বয়স ১২৷
বৃহস্পতিবার রায়ের সময় বিচারক চেম্বারলেইন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানানো সত্ত্বেও কেন্ট কাউন্টি কাউন্সিল সঙ্গীহীন শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের আশ্রয় দিতে এবং দেখাশোনা করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ এটিকেও বেআইনি বলে উল্লেখ করেন তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘আশ্রয়প্রার্থী হিসাবে মর্যাদা রয়েছে এমন শিশুদের ছাড়া, অন্যদের সঙ্গে আলাদা আচরণ করা হয়েছে৷’’
তার দেয়া রায়টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আইনি দায়িত্বগুলো মনে করিয়ে দিয়েছে৷ তার কথায়, ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস’ বিচার না করে সব শিশুর দেখাশোনা করতে হবে৷
বিচারক বলেন বলেন, পরিস্থিতি সমাধানে মন্ত্রণালয় এবং কেন্টের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে ‘‘আলোচনা করা জরুরি’’ ছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘সঙ্গীহীন শিশুদের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বেছে নিতে যুক্তরাজ্যজুড়ে কেন্ট কাউন্টি কাউন্সিল এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে৷’’
এম.কে
৩০ জুলাই ২০২৩