যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ছোট নৌকায় অবৈধভাবে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ রোধে নতুন প্রত্যাবর্তন চুক্তি করেছে। বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া এই ‘ওয়ান-ইন-ওয়ান-আউট’ ব্যবস্থার আওতায় যুক্তরাজ্যে প্রবেশের তিন মাসের মধ্যেই এসব আগমনকারীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে। বিনিময়ে, যারা বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসের যোগ্য এবং কখনও অবৈধ পথে প্রবেশের চেষ্টা করেননি, তাদের যুক্তরাজ্যে আসার সুযোগ দেওয়া হবে।
চুক্তি অনুযায়ী ছোট নৌকায় আগতদের পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই আটক করা হবে এবং ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত আটক রাখা হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির নিরাপত্তা যাচাই করে দুই সপ্তাহের মধ্যে ফ্রান্সকে পুনঃগ্রহণের অনুরোধ জানাতে হবে। ফ্রান্সও দুই সপ্তাহের মধ্যে সাড়া দেবে। যাদের জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি মনে হবে, তাদের গ্রহণে ফ্রান্স অস্বীকৃতি জানাতে পারবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের এ প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য ফেরত পাঠানোর পুরো খরচ বহন করবে এবং ভারসাম্যহীন পরিস্থিতিতে ট্রান্সফার প্রত্যাখ্যান করতে পারবে। যারা যুক্তরাজ্যে বৈধভাবে আসতে চান, তাদেরকে এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট আবেদন জমা দিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য, পরিচয় ও জাতীয়তার প্রমাণ দিতে হবে। নির্বাচিত আবেদনকারীদের বায়োমেট্রিক তথ্য ও কঠোর নিরাপত্তা যাচাইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
স্বরাষ্ট্র সচিব ইয়েভেট কুপার জানিয়েছেন, “ছোট নৌকায় অবৈধভাবে আসা সবাইকে ফেরত পাঠানো হবে। পাচারকারীদের হাতে দেওয়া অর্থ হারিয়ে যাবে। কয়েক দিনের মধ্যেই আটক শুরু হবে এবং আমরা আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত।” যদিও কতজনকে প্রতি সপ্তাহে ফেরত পাঠানো হবে সে বিষয়ে সরকার কোনো তথ্য দেয়নি, তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানা গেছে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ জনকে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই চুক্তি মাসব্যাপী কূটনৈতিক আলোচনার ফল এবং এটি ভাঙা আশ্রয় ব্যবস্থার পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি দাবি করেন, “ছোট নৌকায় অবৈধভাবে প্রবেশ করলে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে। দিন শেষ হয়েছে গিমিক ও ভাঙা প্রতিশ্রুতি, এবার সীমান্তে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।”
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এটি পাচারকারীদের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং শরণার্থীদের মানবিক সংকটে ফেলবে। অ্যাসাইলাম ম্যাটার্সের নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, এটি মানুষের জীবনের সঙ্গে নোংরা ব্যবসা, যা কেবল সহিংস পরিস্থিতিতে তাদের ফিরিয়ে দেবে।
ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রিটাইলিও বলেছেন, এই চুক্তির লক্ষ্য পাচার নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা এবং প্রাণ রক্ষা করা। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতার মাধ্যমে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ তৈরি করবে।
সূত্রঃ মিরর
এম.কে
০৬ আগস্ট ২০২৫