যুক্তরাজ্য আভিজাত্য ও সৌন্দর্যের ছবি মানুষের মনে এঁকে দেয়। তবে এই যুক্তরাজ্যেই সবচেয়ে বেশি বৈষম্য ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন আনাচে কানাচে। যুক্তরাজ্যের কোনো শহরে অনেক ধনিক শ্রেণী বাস করে আবার এখানের কোনো শহরে—হাজার হাজার মানুষ দারিদ্র্যে সীমার নীচে বসবাস করে।
উদ্ভাবন এবং একাডেমিক উৎকর্ষতার কেন্দ্র হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত কেমব্রিজ এখন সরকারের একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। এই শহর যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে ৭৮ বিলিয়ন পাউন্ড অবদান রাখতে পারে। তবে শহরের বিভিন্ন অংশে স্বাস্থ্য ও কল্যাণের ব্যাপক বৈষম্য আশঙ্কা তৈরি করেছে যে, এই উন্নয়নের সুফল সব বাসিন্দা সমানভাবে পায় না।
চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস জানুয়ারিতে যে সরকারী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, তাতে শহরকেন্দ্রে নতুন আবাসন প্রকল্প, জীবনবিজ্ঞান খাতে দ্রুত সম্প্রসারিত ল্যাবরেটরি সুবিধা এবং অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করতে ইস্ট-ওয়েস্ট রেল প্রকল্পে অর্থায়নের কথা বলা হয়েছে। তবে এই বড় বড় বিনিয়োগের পরও ক্যামব্রিজশায়ার কাউন্টি কাউন্সিলের পরিসংখ্যান দেখায় যে শহরের বিভিন্ন অংশে স্বাস্থ্যকর জীবন প্রত্যাশায় ব্যবধান বাড়ছে। যেমন, উত্তর কেমব্রিজের কিং’স হেজেস এলাকায় পুরুষরা “ভাল” স্বাস্থ্যে ৬১ বছর এবং নারীরা ৬২ বছর পর্যন্ত বাঁচার আশা করতে পারে। অথচ মাত্র তিন মাইল (৫ কিমি) দক্ষিণের নিউনহ্যামে এই সংখ্যা পুরুষদের গড় আয়ু ৭৩ এবং নারীদের ৭৭ বছর।
২০১৭ সালে সেন্টার ফর সিটিজ-এর একটি প্রতিবেদন কেমব্রিজকে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বৈষম্যমূলক শহর হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, যেখানে জীবনযাত্রার খরচ দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে এবং ধনী ও দরিদ্রদের মাঝে ব্যবধান আরও গভীর হচ্ছে।
২৯ বছর বয়সী কিয়ার বোয়াটার উত্তর-পূর্ব কেমব্রিজের অ্যাবি ওয়ার্ডে ভিত্তিক কমিউনিটি-ফোকাসড দাতব্য সংস্থা অ্যাবি পিপল-এ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন—এলাকাটি শহরের সবচেয়ে দরিদ্র অংশগুলোর একটি। এই সংস্থাটি খাবার বিতরণ, বাগান কর্মসূচি এবং সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাসিন্দাদের সহায়তা করে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েট বোয়াটার বলেন, এই সংস্থাটি তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি জীবনরেখার মতো কাজ করেছে।
তিনি বিবিসিকে বলেন, ” কেউ আমাকে বলেছিল অ্যাবিতে মানুষের জীবনের গড় আয়ু কেমব্রিজের অন্য অংশের তুলনায় ১১ বছর কম। সেটা শুনে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এটা বিশাল বৈষম্য। এখানে তো টাকা আছে—কলেজ, টেক সেক্টর—কিন্তু একটা বড় অংশের মানুষ এর কিছুই দেখতে পায় না। অ্যাবি ওয়ার্ডেই আপনি এই বৈষম্যটা স্পষ্ট দেখতে পাবেন।”
ক্যামব্রিজশায়ার কাউন্টি কাউন্সিলের পাবলিক হেলথ ডিরেক্টর স্যালি কার্টরাইট বলেন, পুষ্টিকর খাবার, ব্যায়ামের সুযোগ এবং কমিউনিটি সুবিধার অসম প্রবেশাধিকার এই স্বাস্থ্যগত ব্যবধানের জন্য দায়ী।
তিনি বলেন, “এই অসাম্যগুলো ভুলে গেলে চলবে না। এটা এক ছাঁচে ফেলা যাবে না—কেউ কাজ করছে কি না, কী ধরনের চাকরি করছে বা কেমন বাসস্থানে থাকে, এসবই জীবন প্রত্যাশায় প্রভাব ফেলতে পারে।”
কার্টরাইট বলেন, স্বাস্থ্যগত ফলাফল আয়ের পরিমাণ, আবাসনের অবস্থা, স্বাস্থ্যসেবার প্রবেশাধিকার এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবনের মতো আচরণগত ঝুঁকির সম্মিলিত প্রভাবে নির্ধারিত হয়।
ইক্যুয়ালিটি ট্রাস্ট-এর মতে, কেমব্রিজে প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে প্রায় ১টি পরিবারের বার্ষিক আয় ১৬,৫১৮ পাউন্ডের কম। সংস্থাটির মতে, একটি বড় অংশের বাসিন্দা নিম্ন আয়ে জীবনযাপন করছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কষ্টে রয়েছে।
লিসা কনোলি, একজন সিঙ্গেল মা অ্যাবি এলাকায় ছোট হতে বড় হয়েছেন—যেখানে তার পরিবার ১৮০০ সাল থেকে বসবাস করছে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহরগুলোর একটিতে বসবাস করলেও সরকারী বিনিয়োগগুলো সকল কমিউনিটির গায়ে লাগেনি যা দুঃখজনক।
সূত্রঃ এক্সপ্রেস ডট কম
এম.কে
১৪ এপ্রিল ২০২৫